1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha :
সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন

অন্তরের টানে তাঁরা এখন বাংলাদেশে

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ২৩১ বার

প্রতিবেদক : একজনের জন্ম ও বড় হওয়া যুক্তরাষ্ট্রে। আরেকজনের জন্ম বাংলাদেশে হলেও এক বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানেই বড় হওয়া। পেশায় দুজনই চিকিৎসক। যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নিজ দেশের জন্য অন্তরে টান অনুভব করেন। অন্তরের টানেই তাঁরা এখন বাংলাদেশে। একজনের নাম নাহরীন হোসনা আহমেদ, অন্যজন সাঈদা হাসান।
নাহরীন জন্মের পর দুই বছর বয়সে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তারপর থেকে নিয়মিত আসা-যাওয়া চলছে। তিনি নিউইয়র্ক মেডিকেল কলেজের পালমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল ফেলো। সাঈদা নিউইয়র্ক মাউন্ট সিনাই মেডিকেল সেন্টারের ইমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসক। দুজনের কাজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে। বাংলাদেশে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউর চিকিৎসকদের ‘সোনোসাইড আলট্রাসাউন্ড’ মেশিনের ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন প্রায় ৭০ জন।
নাহরীন বললেন, আকারে ছোট এই আলট্রাসাউন্ড মেশিনটি প্রশিক্ষণ শেষে আইসিইউর চিকিৎসকেরাই চালাতে পারবেন। জরুরি অবস্থায় রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে পরীক্ষা করার দরকার হবে না বা মেশিন চালানোর জন্য অন্য লোকের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না। নাহরীন ও সাঈদার সঙ্গে অ্যাপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসক নাজনীন আহমেদও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশে আসার পর প্রথমবারের মতো নাহরীন ও সাঈদার দেখা হয়েছে। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ই-মেইলে যোগাযোগ।
নাহরীন সিলেটের মেয়ে। সাঈদা খুলনার। নাহরীন জানালেন, বাংলাদেশে আসার তিন থেকে চার মাস আগে ফেসবুকে সোনোসাইড আলট্রাসাউন্ড মেশিন কেনার জন্য তহবিল গঠনের কথা বলা হয়। এই তহবিল গঠনের সময়ই সাঈদা নাহরীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, তিনিও বাংলাদেশে কিছু একটা করতে চান। তারপর দুজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়াল দেন বাংলাদেশে। বন্ধু, আত্মীয়, পরিবার ও অচেনা মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ১০ হাজার ইউএস ডলার দিয়ে কেনা মেশিনটি নাহরীন সঙ্গে করে এনেছেন। আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তা হস্তান্তর করবেন।
নাহরীনের দাদা চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে শহীদ হন। তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নিউইয়র্কে বসবাসকারী দাদি হোসনে আরা আহমেদ সিলেট উইমেন্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। নাহরীনের বাবা জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও মা ফাতেমা আহমেদ দুজনই চিকিৎসক। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও বসবাস করছেন।
গতকাল শনিবার সকালে নাহরীনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কথা বলতে চাইলে আইসিইউর বাইরে এসে অল্প সময় কথা বলেন তিনি।
নাহরীন বলেন, ‘দাদা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। দাদি, বাবা, মা সব সময় দেশের জন্য কিছু না কিছু করেন। যুক্তরাষ্ট্রে আমার জন্ম, তবে অন্তরে বাংলাদেশের জন্য একধরনের টান অনুভব করি। মেডিকেলের শিক্ষার্থী ছিলাম যখন, তখনো পড়াশোনার অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে কাজ করার সুযোগ হয়। তখন আমার অভিজ্ঞতা ততটা ছিল না। এবার আমি আমার অভিজ্ঞতাটা এখানে কাজে লাগাতে চাইছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশের চিকিৎসা, বিশেষ করে আইসিইউর ব্যবস্থা কতটা পিছিয়ে—এ প্রশ্নের উত্তরে নাহরীন বলেন, ‘বাংলাদেশে যে মানবসম্পদ, তারা খুব মেধাবী। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে চিকিৎসকেরা তেমন কিছু বলতে না পারলেও প্রশিক্ষণের পরে যে অগ্রগতি দেখছি, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। এই মানবসম্পদকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি দেওয়া সম্ভব হলে চিকিৎসাব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। সাংগঠনিক দক্ষতারও প্রয়োজন।’
আলট্রাসাউন্ড মেশিন প্রসঙ্গে নাহরীন বলেন, এই মেশিন দিয়ে নিউমোনিয়া, ফুসফুসে পানি, বুকের এক্স-রে, হার্টের অবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে শকে থাকা রোগী, পেটের মধ্যে রক্তক্ষরণসহ যেকোনো বিষয় দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে। ফলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। অনেক রোগীর জীবন বাঁচবে। তবে চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে না পারলে লাভ হবে না। আর হাসপাতালের শুধু একটি নয়, প্রতিটি জরুরি বিভাগে এই মেশিন থাকতে হবে। তাই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
গতকাল সাঈদা হাসানের সঙ্গে কথা হয় টেলিফোনে। সাঈদা তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রথম চিকিৎসক। স্বামীও চিকিৎসক। ছোটবেলা থেকে সাঈদার বাড়িতে ইংরেজি বলা বারণ ছিল। ছোট থেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন তিনি। কক্সবাজারে স্বেচ্ছাসেবকেরও কাজ করেছেন তিনি।
সাঈদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ দেশে এসে একজন বা দুজন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করলাম, তার চেয়েও সংশ্লিষ্ট মানুষদের যদি স্বাস্থ্যশিক্ষা দিতে পারি, তা বেশি কাজে লাগবে। জরুরি মেডিসিনের বিষয়টি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পরিচিত কোনো বিষয় না। এই ব্যবস্থাটা কেন প্রয়োজন, তা নিয়ে পাইলট আকারে কিছু একটা শুরু করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছি।’
নাহরীন ও সাঈদা দুজনই জানালেন, বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশের জন্য কিছু করতে চান, কিন্তু সব সময় সেই সুযোগ হয় না।
চলতি মাসেই দুজন যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেবেন। এবার চিকিৎসকদের যে প্রশিক্ষণ দিলেন, তা অনলাইনে ফলোআপ করবেন। আবার দুজনই বাংলাদেশে হয় একসঙ্গে, না–হয় আলাদা আলাদা আসবেন বলেও জানালেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হানিফ টাবলু প্রথম আলোকে বলেন, নাহরীনের পরিবারের সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেই নাহরীনের এ দেশে এসে কিছু করাটা সহজ হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগের বাইরে সরকারিভাবেই প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা যাতে দেশের জন্য কিছু একটা করতে পারেন, সে ধরনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সুত্র : প্রথম আলো থেকে নেয়া

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Mohajog