মোঃ সহিদুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা : নারিকেল শুপারির রাজধানী হিসেবে পরিচিত জেলা লক্ষ্মীপুর। এখানকার কৃষকরা আগে নারিকেল থেকে ছোবড়া ছাড়ানোর পর তা ফেলে দিতো। কিন্তু এখন ওই পরিত্যক্ত ছোবড়া দিয়ে তৈরী হচ্ছে জাজিম,সোফা ও চেয়ারের গদির মত নানা রকমের প্রসাধনী সামগ্রী। ফলে লক্ষ্মীপুরের নারিকেলের ছোবড়ার কদর এখন সবার কাছে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ছোবড়া বিক্রি করে জীবন ও জীবিকা চলছে লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, কমলনগর, রামগতি, রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার কয়েকশ পরিবারের। এর মধ্যে রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ বাজার এবং পাশবর্তী বেশ কিছু পরিবারের ভাগ্যই বদল হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এখানকার কৃষকরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে কাঁচা ও শুকনো নারিকেল সংগ্রহ করে। তারপর ছোবড়া ছাড়িয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে ৪০-৫০ কেজি আকারের বেল্ট বেঁধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা ও পাইকারী ক্রেতারা এসে এগুলো কিনে করে নিয়ে যায় বলে জানান ব্যাপারীরা।
বেশ কয়েকজন মহাজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেও ব্যপারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা ও শুনো নারিকেল সংগ্রহ করেন।
ছোবড়া থেকে ছাড়ানো নারিকেলগুলো তেলের কারখানায় বিক্রি করা হয়। স্থানীয় শ্রমিক কালাম ও মনির জানান, তারা ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে এই কাজ করে আসছেন। এ কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছেন। তারা আরো জানান এই কাজ সারাবছর থাকে না, তবে সারাবছর থাকলে অনেক ভালো হতো। এক হাজার নারিকেলের ছোবড়া ছাড়াতে তারা মজুরী পায় ৫/৬ শ টাকা। ছোবড়া ছাড়ানো শেষে মেশিনের সাহায্যে সেগুলো মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় জাজিম , সোফা ইত্যদি তৈরী জন্য।
লক্ষ্মীপুর জেলায় নারিকেল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে এখানকার বেকার শ্রমিকরা পুরো বছর জুড়ে কাজ করতে পারতো। আর উৎপাদিত পণ্য দেশের অর্থনীতিতে ভালো সুফল বয়ে আনতো। সরকার এর প্রতি নজর দিলে আরো অনেকেই আগ্রহ দেখাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জানা গেছে, শ্রমিকরা প্রতিদিন ১৮’শ থেকে ২ হাজার নারিকেলের ছোবড়া ছাড়াতে পারেন। এতে জনপ্রতি আয় হয় প্রায় ১২ শত টাকা। মহাজন আবদুর রহীম জানান, ১০ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি এই ব্যবসা করে আসছেন। নারিকেল থেকে তৈল, আর ছোবড়া থেকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী তৈরী হওয়ায় তার দুই ধরনেরই ব্যাবসাই হচ্ছে। আর এর কদর দিনদিনই বাড়ছে।
বর্তমানে অনেকেই এ ব্যাবসার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। নারিকেলের ছোবড়া সারা বছর চলে না, বছরে ছয় মাস এর সিজন থাকে। এ সময় ভালো চলে এবং শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তার এ কাজে ৭/৮ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করে। তারা নারিকেল সংগ্রহ থেকে ছোবড়া বাজারজাতকরন পযন্ত কাজ করে। মালিক ও মহাজনরা শ্রমিকদের মাসিক কিংবা চুক্তি ভিত্তিক প্ররিশ্রমিক দিয়ে থাকেন। এতেই তারা বেশ ভালো আছেন এবং আনন্দ নিয়েই কাজ করছেন। তবে চাহিদানুপাতে তারা এ কাজের জন্য সরকারি সহায়তা সহ পৃষ্ঠপোষকতার দাবী সহ ভবিষ্যতে আরো ভালো অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম বলে জানান তারা।
বি : দ্র : শেষের পাতার নিজের দিকে ৩ কলাম ছবি ও ছবির নিচে ২ কলাম নিউজ ছাপা হবে