1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

পিছিয়ে পড়বে শিল্প খাত, বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ মার্চ, ২০১৭
  • ২৬৭ বার

ডেস্ক রিপোর্ট :  নতুন করে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানো দেশের শিল্প খাতের ওপর দুভাবে প্রভাব ফেলবে। একদিকে সরাসরি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, অন্যদিকে বেড়ে যাবে পরিবহন খরচ। ফলে পণ্যের দাম বাড়বে।

এতে সার্বিকভাবে ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ। তাদের গ্যাসের বাড়তি দাম যেমন দিতে হবে, তেমনি পণ্যসামগ্রীও কিনতে হবে বাড়তি দামে। কয়েক মাস পর বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাড়তি ব্যয় করার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে এখনই।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত বৃহস্পতিবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর এর প্রভাব নিয়ে এসব কথা বলেছেন দেশের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী।

বিইআরসির ঘোষণায় দুই ধাপে শিল্পের গ্যাসের দাম ১৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৭৬ পয়সা করা হয়। একইভাবে ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাসের দাম ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার করা হয় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। এ ছাড়া রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৬ শতাংশ, বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং পরিবহনের গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

ভোক্তা অধিকারকর্মীরা বলছেন, যেখানে যতটুকু দাম বাড়ানো হয়েছে, চূড়ান্তভাবে তার মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে তাঁর খরচ ওঠাবেন, অটোরিকশাচালক ভাড়া বাড়িয়ে তাঁর খরচ ওঠাবেন, সরকারের কোষাগারে জমা হবে বাড়তি শুল্ক ও করের অর্থ। কিন্তু সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে জনগণের। যেহেতু প্রকৃত মজুরি বাড়ছে না, সেহেতু গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আবার উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের খরচও বাড়বে। তিনি বলেন, এখন রপ্তানি খাতে অবস্থা বেশি ভালো নয়, প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। এতে এখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হতে পারে।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, এসব কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর বাসাবাড়িতে যে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়, তা গরিব মানুষেরাও ব্যবহার করে। এ খাতে তাদের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যয় বেড়ে যাবে। এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না সাবেক এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘গ্যাস খাতে এখন তো সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না। কাজেই দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা কী?’

এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার খবর গণমাধ্যমে আসার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী  বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বস্ত্র খাতের স্পিনিং উপখাত। কারণ, সুতার উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। তখন পোশাকশিল্প মালিকেরা বাড়তি দাম দিয়ে দেশীয় সুতা কিনবেন না। সেই সুযোগ নিতে পার্শ্ববর্তী দেশের ব্যবসায়ীরা বসে আছেন।

তপন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা বলছি না যে গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। কিন্তু একদিকে চাহিদামতো গ্যাসের চাপ না পাওয়ায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার মীমাংসা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানো অন্যায্য। আমরা বারবার ইভিএম মিটার বসানোর কথা বলছি, যেন ব্যবহারের ওপর গ্যাস বিল ধার্য করা যায়। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ও এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক
আবুল কাসেম খান  বলেন, উৎপাদন খরচের একটি বড় অংশ হলো জ্বালানির দাম। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়লে তা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘তুলনামূলক সস্তা শ্রম ও কম দামের জ্বালানি আমাদের দুটি বড় সুবিধা। এ দুটি সুবিধা টিকিয়ে রাখতে হবে। দিন যত যাবে, ততই শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে হবে। কিন্তু জ্বালানির দাম টেকসই হওয়া উচিত।’ একদিকে যেমন জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি এর মূল্যও প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম দেশের এখনকার গ্যাসের দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি উল্লেখ করে আবুল কাসেম খান আরও বলেন, সেই দরে গ্যাস কিনতে হলে পুরো ব্যয়কাঠামোই পাল্টে যাবে। তার প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক। তিনি মনে করেন, দেশে নতুন গ্যাসকূপ খনন ও নতুন ক্ষেত্র উত্তোলনের ওপর জোর দেওয়া উচিত। নইলে গ্যাসের দাম প্রতিযোগিতামূলক রাখা যাবে না।

ব্যবসায়ীরা যখন উৎপাদন খরচের হিসাব করছেন, তখন নিম্ন আয়ের পরিবারেও গ্যাসের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তাঁদের ক্ষেত্রে হিসাবের বেশি কিছু নেই, আগামী জুন থেকে দুই চুলায় গ্যাসের দাম ৩০০ টাকা বেশি দিতে হবে। আবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, তাও সাধারণ মানুষ এখন জানে।

রাজধানীর মিরপুরের মণিপুর এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক সুলতান মিয়া একটি টিনশেড বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। মাসিক ভাড়া ৩ হাজার ৭০০ টাকা। গত মাসে বাড়িওয়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল আলাদা দিতে হবে। দর-কষাকষি করে সুলতান মিয়া বিদ্যুৎ বিলটি বাড়িভাড়ার ভেতরে রাখতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি আসে। বাড়িওয়ালাকে বলেছি তা দিতে পারব না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে গ্যাসের বিল অনেক বেড়ে গেছে।’

বাড়তি খরচ জোগাতে সুলতান মিয়াকে বিশ্রাম বাদ দিয়ে আরও বেশি সময় রিকশা চালাতে হবে, অথবা রিকশার ভাড়া বাড়াতে হবে। অন্যদিকে সিএনজিচালিত (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস) অটোরিকশার চালক মুজিবর রহমান বলেন, ভাড়া না বাড়িয়ে উপায় নেই। তিনি দাবি করেন, এখন পুরো দিন অটোরিকশা চালাতে প্রায় ২৫০ টাকার গ্যাস প্রয়োজন হয়। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ৩০০ টাকা লাগতে পারে।

মুজিবর রহমান বলেন, ৯০০ টাকা মালিকের জমা, ৩০০ টাকার গ্যাস, ২০০ টাকা পথখরচার পর যা থাকে, সেটা সারা দিনের পরিশ্রমের আয়। খাটাখাটি করে ৫০০ টাকা আয় না হলে সিএনজি চালানোই ছেড়ে দিতে হবে।

বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। তবে সরকার সরবরাহ করতে পারে ২৭০ কোটি ঘনফুট। দেশের মোট গ্যাসের চাহিদার ২০ শতাংশ রান্না ও পরিবহন খাতে ব্যবহার করা হয়। বাকিটা শিল্প, বিদ্যুৎ, সার উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহার করা হয়। তবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম মনে করেন, যে খাতেই গ্যাসের দাম বাড়ুক না কেন, তার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog