প্রতিবেদক : ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমার দুঃখ লাগে সেদিন অর্থমন্ত্রী এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে আমার পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এরপর আমাকে আমেরিকা থেকে বারবার থ্রেট (হুমকি) করা হয়। অথচ তিনি তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
২ মার্চ রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণের কারণেও দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এ জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের অবদান রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই ক্রেডিট নেন। কদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী খুব ক্ষুদ্রঋণের প্রশংসা করে বললেন যে, ক্ষুদ্রঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন যদি তার জন্যই হতো, তাহলে আর ৬০ ভাগের মতো দারিদ্র্য থাকে কেন, কীভাবে এটা ২২ ভাগে নেমে এসেছে, কবে নেমে এসেছে।’
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অর্থমন্ত্রীকেই বলব, উনি যদি হিসাব নেন, দারিদ্র্য যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে, সেটা কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ; যেটা অর্থমন্ত্রীও কর্মসূচি দিয়েছেন আবার কিবরিয়া সাহেব যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তাকে দিয়েও আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালে যেসব কর্মসূচি নিয়েছিলাম, তারই ফলাফলে আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। আর যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করেন, তারা সম্পদশালী হয়, তারা ধনশালী হয়। কারণ, সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ; ওই গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ হিসেবে চলে যায়। সে কোনোমতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। যারা এই ব্যবসা করে, তারা চায়ও না এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে ব্যবসা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতি করতে এসেছি, ব্যবসা করতে না। মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য এসেছি। দরিদ্র মানুষকে নিয়ে ব্যবসা করে বিত্তশালী হওয়ার জন্য আসিনি, এসেছি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে। এসেছি জনগণের সেবা করতে, কল্যাণ করতে। যার কারণে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচির ফলে দারিদ্র্যবিমোচন হচ্ছে। কারণ আমরা মানুষকে দারিদ্র্যবিমোচন করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করতে চাচ্ছি। যেন কারওর কাছে হাত পেতে নয়, কারওর কাছে মাথা নত করে নয়।’
বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান, খালেদা খানম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা বেগম প্রমুখ।