প্রতিবেদক: সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (১/১১) বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ‘বাজেয়াপ্ত’ করা ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে ওই অর্থ এখন ব্যবসায়ীদের ফেরত দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করীম। ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
রিট আবেদনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কৌঁসুলি আহসানুল করিম বলেন, হাইকোর্ট টাকা ফেরত দিতে রায় দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপিলগুলো খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে টাকা ফেরতে হাইকোর্টের রায় বহাল রইল। তবে কত দিনের মধ্যে তা দিতে হবে, সেটা আপিল বিভাগের রায় পেলে জানা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, এতগুলো টাকা সরকার কীভাবে দেবে এটা চিন্তার বিষয়। রিভিউ হবে কিনা সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ১১টি আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই রায় ইতিহাসে নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচিত হবে। আইন এখানে থেমে থাকবে না।
বুধবার শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের (টিএফআই) কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া এই ১২শ কোটি টাকা ফেরত দিতে ২০১০ ও ২০১১ সালে হাইকোর্ট পৃথক নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব আদেশের বিরুদ্ধে একত্রে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ছাড়াও ‘অজানা’উল্লেখ করেও চার দফায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীদের নামও সেই তালিকায় ছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বসুন্ধরা গ্রুপের ২৫৬ কোটি, যমুনা গ্রুপের ৩০ কোটি, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি, বিএনপির প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের ২০ কোটি, কবির স্টিলের সাত কোটি, ব্যবসায়ী নুর আলীর ৪০ কোটি ৫০ লাখ, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ, সাগুফতা হাউজিংয়ের ২ কোটি ৫০ লাখ, হোসাফ গ্রুপের ১৫ কোটি, পারটেক্স গ্রুপের ১৫ কোটি, স্বদেশ প্রোপার্টিজের ৯ কোটি, ইসলাম গ্রুপের ৩৫ কোটি, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৮ কোটি, ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের ১৭ কোটি, আবু সুফিয়ানের ১৪ কোটি, শওকত আলী চৌধুরীর ৬ কোটি, আশিয়ান সিটির ১ কোটি, পিংক সিটির ৬ কোটি ৪১ লাখ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৯ কোটি ৪৫ লাখ, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ১৫ কোটি, ওয়াকিল আহমেদের ১৬ কোটি, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ২০ কোটি ৪১ লাখ, এলিট পেইন্টের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি, কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের ৭ কোটি, জনৈক মালিকের ৪ কোটি এবং ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ২ কোটি ২০ লাখ টাকা।