ফিচার ডেস্ক : ১৯০৬ সালের কথা, ভিয়েনা শহরে বসবাসরত এক ষোড়শীর নাম স্টিফানি আইজ্যাক। তার বাবা ছিলেন ধনাঢ্য ইহুদি ব্যবসায়ী। একদিন রাস্তার ধারে বসে থাকা এক চিত্রশিল্পীকে দিয়ে শখ করে স্টিফানি তার নিজের একখানা ছবি আঁকালো।
অসম্ভব রূপবতী এই মেয়েটির ছবি আঁকতে গিয়ে মনের অজান্তেই শিল্পী তার প্রেমে পড়ে গেল। শিল্পীর বয়স তখন ১৮, তার স্বপ্ন একজন বড় চিত্রশিল্পী হওয়া। ভিয়েনার এ্যাকাদেমি অফ ফাইন আর্টস-এ ভর্তি হওয়া যার লক্ষ্য। শিল্পীর অবসর কাটে রাস্তার পাশে ছবি এঁকে। আবার মাঝে মাঝে পথচারীদের ছবি এঁকে দু’চার পয়সা রোজগারও করে।
শিল্পীদের মন অনেক রোম্যান্টিক হবে এটাই স্বাভাবিক। পরদিন মেয়েটিকে সে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি হাঁ বা না, কিছুই বলে না। ছেলেটি মাঝে মাঝে মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থাকতো। একপলক দেখার জন্য।
বিশাল বাড়িটি উঁচু প্রাচীরে ঘেরা। বিশাল লোহার গেট। তবে মাঝেমাঝেই ছেলেটি তার পোষা প্রিয় কুকুরকে গেটের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিত। এসময় কুকুরটির মুখে থাকত প্রেমপত্র। ভিয়েনা আসার সময় তার মা এই কুকুরটিকে তার সঙ্গে দিয়েছিলেন। বলা যায়, কুকুরটি ছিল মায়ের দেয়া শেষ উপহার! কারণ এরপর আর কোনদিন মায়ের সঙ্গে ছেলেটির দেখা হয়নি। তিনি মারা গিয়েছিলেন।
মেয়েটির পরিবার বিষয়টি আমলে নিলো। ছেলেটি চালচুলোহীন, রাস্তার ছেলে। তার উপরে ইহুদি নয়; এই সম্পর্ক কিছুতেই সম্ভব নয়। আর ছেলেটির ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। তারা ছেলেটিকে বারবার বারণ করলো । কিন্তু প্রেম কি আর বারণ শোনে?
স্টিফানি আইজ্যাক
ছেলেটি সুযোগ পেলেই মেয়েটিকে দূর থেকে দেখতো। উত্তর না এলেও প্রেমপত্র দিত। একদিন প্রেমপত্র সমেত কুকুরটিকে আবার পাঠালো মেয়েটির বাড়িতে। কিন্তু এইদিন আর কুকুরটি ফিরে এল না। ছেলেটি সারারাত অপেক্ষা করে, সকালে চলে গেল। পরদিন আবার মেয়েটির বাড়ির সামনে গেল। বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে ছেলেটি তার সেই প্রিয় কুকুরটির মৃতদেহ দেখতে পেল। নির্মমভাবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
সেইদিন কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি চলে এলো। আর কোনদিন ওই বাড়ির সামনে যায়নি সে।
চালচুলোহীন ওই রাস্তার ছেলেটি পরে যা করেছিলো তা ইতিহাস। বলা যায় রাস্তার সেই ছেলেটি নিজ হাতে গত শতাব্দীর ইতিহাস লিখে গেছে। ছেলেটি মারা যাবার অনেক পরে মেয়েটি নাকি বলেছিল, সে ছেলেটিকে মনে মনে ভালবাসত। সাহস করে বলতে পারে নি।
যাই হোক, ছেলেটির নাম এডলফ হিটলার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই জার্মানদের বাঁচতে শিখিয়ে ছিলেন। যদিও তার সেনাবাহিনী প্রায় ৬৩ লাখ ইহুদিকে প্রাণে মেরেছিলো।
অনেক ইতিহাসবিদই হিটলারের এই ইহুদি বিদ্বেষী মনোভবের জন্য তার ছোটবেলার প্রেম ও এ সম্পর্কীত আঘাতকেই দায়ী করেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল