প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে সম্ভাব্য ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ করা থেকে বিরত থাকতে এবার ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর সরকারকে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ না করতে আহ্বান জানিয়ে আসা বিএনপির এই নেতা এ ধরনের চুক্তিতে দেশের জনগণের আপত্তি রয়েছে দাবি করে তা থেকে বিরত থাকতে ভারতের প্রতি এই অনুরোধ জানান।
বুধবার দুপুর রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “ভারতের কাছে আমাদের অনুরোধ, যে চুক্তি সম্বন্ধে বাংলাদেশের জনগণ জানে না, বাংলাদেশের জনগণ এই চুক্তি প্রয়োজনীয় বলে মনে করে না।
“ভারতকে আমি বলব, আপনারা আপনাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে কেন এই বিতর্কিত চুক্তি করবেন? আমরা এই বিতর্কিত চুক্তি থেকে ভারতকেও বিরত থাকার জন্য এই সভা থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।”
আগামী ৭ এপ্রিল চারদিনের সফরে ভারত সফর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে ইতোমধ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়টি থাকলেও এক্ষেত্রে চুক্তি নাকি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে সেবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও কোনো চুক্তিই গোপন থাকতে না বলে জানান মন্ত্রী।
মাহমুদ আলী বলেন, “যখন হবে (প্রতিরক্ষা চুক্তি) তখন দেখতে পাবেন, আমরা সবাইকে জানিয়ে দেব। এখানে গোপন-টোপন করার কিছু নেই।” যদিও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যেসব চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে, তা সফরের আগেই জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত আলোচনায় ভারতকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ অভিহিত করে তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে ৩৩টি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপত্তা চুক্তি। বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, একদিকে বঙ্গোপসাগর। ভারত আমাদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু। তাদের থেকে বাংলাদেশ কখনও আক্রান্ত হবে, এটা আমরা কখনও চিন্তা করি না।
“তাহলে আমাদের কোন দিক থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বা আশঙ্কা আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের জনগণকে আপনার বলতে হবে। আর যদি না-ই থেকে থাকে, তাহলে নিরাপত্তা চুক্তি কেন?”
ভারতের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ করা হলে তা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হুমকি হবে বলে বেশ কিছু দিন ধরে দাবি করে আসছে মোশাররফের দল বিএনপি।
বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে সেই চুক্তি জনগণ আগামী দিনে রুখে দেবে বলে বলছেন মোশাররফ।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের সবচাইতে গুরুত্বর্পূর্ণ অগ্রাধিকার, তা ছিল পানি সমস্যা। আমরা ভাটির দেশের লোক, ভারত উপরের দিকের। আমাদের বাঁচা-মরা বিষয় হচ্ছে পানি। এই পানির থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে আর কোনো চুক্তি হতে পারে না।
“আমরা বলতে চাই, দেশের জনগনের প্রাণের দাবি, বাঁচা-মরার সমস্যা তিস্তা চুক্তি করতে না পারেন, তাহলে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) ভারত সফরে কোনো সফলতা আনতে পারে না, এই সফর ব্যর্থ হতে বাধ্য।”
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরজাহান ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা রওশন আরা ফরিদ, রাজিয়া আলীম, পেয়ারা মোস্তফা, শামসুন্নাহার, আমেনা খাতুনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।