প্রতিনিধি : রোহিঙ্গারা যতদিন পর্যন্ত স্বদেশে ফিরে না যায় ততদিন আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এছাড়া কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি । শনিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সীমান্তবর্তী কক্সবাজারে অবস্থানকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সকল রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সরকার নিরন্তরভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সকল রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতবছর অক্টোবরে চেকপোস্টে হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী পুলিশ একযোগে রোহিঙ্গাদের দমনে অভিযানে নামে। এরপর আরও অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ঢলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের আপাত সমাধান হিসেবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর উদ্যোগে নিয়েছে।
এক দশক আগে সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে জেগে ওঠা এই চরকে বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এর সমালোচনা করে আসছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দুটি শরণার্থী শিবির রয়েছে। এতে নিবন্ধিত ৩৪ হাজার শরণার্থী থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার হয়ে মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দাদের দাবি। রোহিঙ্গাদের কারণে নানাভাবে কক্সবাজারের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মায়া।
“রোহিঙ্গারা যাতে শরণার্থী শিবিরের বাইরে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা জরুরিভাবে নিতে হবে। তারা শিবিরের বাইরে গেলে গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে যাবে। কোনো রোহিঙ্গা আইন অমান্য করলে সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে হবে।” সেইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ সার্বিক মানবিক সহযোগিতা যথাযথভাবে প্রদানের জন্য মন্ত্রী মায়া সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজি আব্দুর রহমান জানান, বেলা ১১টার দিকে মন্ত্রী উখিয়ার কুতুপালংয়ের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেন। তিনি বলেন, পরে সেখানকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও এনজিও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে মন্ত্রী শিবিরের বিভিন্ন এনজিওর কার্যালয় ও তাদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এরপর মন্ত্রী কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, মহাপরিচালক রিয়াজুল আহমদ, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজি আব্দুর রহমান ও কক্সবাজার ত্রাণ, পুনর্বাসন ও শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার আবুল কালাম এবং ইউএনএইচসিআর ও আইওএমসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
কক্সবাজার পৌঁছে মন্ত্রী ত্রাণ, পুনর্বাসন ও শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজি আব্দুর রহমান।