প্রতিবেদক : তিস্তার পানি আসবেই, পানি কেউ আটকে রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি নিয়ে এখন অনেকেই কথা বলেন; কিন্তু ভারত যখন গজলডোবায় বাঁধ দিল, তখন যারা ক্ষমতায় ছিল, তখন তো কেউ কথা বলেনি।
তিস্তার পানি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য কি না—এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। তাঁকে বলেছি, অন্য নদীর পানিগুলো তারা নিজেরা নিয়ে তিস্তার পানি আমাদের দিন। এটা নিয়ে আলোচনা চলবে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বাস্তবঘনিষ্ঠ উদ্ভাবনমুখী অর্থনীতি গড়ে তুলতে চায়, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। আমি নিশ্চিত একসঙ্গে কাজ করলে, এ অঞ্চলের মানুষের জীবন আমরা বদলে দিতে পারব।
“বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে এবং বর্তমানে তা এক বিশেষ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতা-বিশ্বস্ততা-বন্ধুত্বের বহুমুখী সম্পর্ক এই সফরের মাধ্যমে আরও সুসংহত হয়েছে।”
দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনা দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনা
শেষ হাসিনা সোমবার নয়া দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত সংবর্ধনার কথা তুলে ধরে বলেন, “সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমি বাংলাদেশ যে সার্বভৌম দেশ, তা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করি এবং একইসাথে বাংলাদেশ যে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত, তা উল্লেখ করি। আমি আরও বলি যে, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং বিবাদের মাধ্যমে কোন কিছু অর্জন সম্ভব নয় বলে মত প্রকাশ করি।”
গত শুক্রবার চারদিনের সফরে ভারত যান শেখ হাসিনা। মোদী জমানায় এটাই ছিল তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। গত শুক্রবার দিল্লি পৌঁছেন তিনি। সফরের প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে চমক দেখান মোদী। সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকেন হাসিনা।
এই সফরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মাননাও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ভারত সফরের সকল কর্মসূচি তুলে ধরেন। ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানোর কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
দেশে ফেরার পর শুভেচ্ছাসিক্ত শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর শুভেচ্ছাসিক্ত শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার এই সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে মোট ৩৫টি দলিল স্বাক্ষরিত হয়। এগুলোর মধ্যে ১১টি চুক্তি এবং ২৪টি সমঝোতা স্মারক।
সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ফের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে এসেছেন শেখ হাসিনা।
বাম দল সিপিবি বলেছে, ভারতের সব চাওয়ার বাস্তবায়ন হলেও বাংলাদেশের চাওয়াগুলোর ক্ষেত্রে শুধু প্রতিশ্রুতি আসায় তা সরকারের দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাসদসহ তাদের জোটসঙ্গীদের দাবি, শেখ হাসিনার এই সফর পুরোপুরি সফল হয়েছে।
সফরের শেষ দিনে এক কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা চুক্তিকে ‘দেশ বিক্রি’ বলছে, তারা অর্বাচীন।