প্রতিবেদক : বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শোভাযাত্রার কর্মসূচি বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শোভাযাত্রা না করার এই সিদ্ধান্ত হয়। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন ওই বৈঠকে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে পুরান ঢাকা থেকে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছিল এতদিন, যেখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নিতেন।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণে হেফাজতে ইসলামের মতো সংগঠনগুলোর দাবির সঙ্গে সহমত জানালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে বলেন, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ‘হিন্দুয়ানি’ কোনো বিষয় নয় এবং এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জনগণের যাতে ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সেজন শোভাযাত্রা বাতিল করা হয়েছে।”
চারুপীঠ নামের একটি সংগঠন ১৯৮৫ সালে যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষের উৎসবে পাপেট ও মুখোশ নিয়ে বাদ্যা বাজিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা চারুকলার শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছেন।
এই শোভাযাত্রা এখন কেবল বর্ষবরণ উৎসবের অনুসঙ্গই নয়, এর মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে মেলে ধরার পাশাপাশি সমাজে অবক্ষয় থেকে মুক্তি, পেছনের দিকে হাঁটা প্রতিরোধের আহ্বানও জানানো হয়।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনে গতবছর ৩০শে নভেম্বর জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
গতবছর গণভবনে আওয়ামী লীগের বৈশাখী উৎসব গতবছর গণভবনে আওয়ামী লীগের বৈশাখী উৎসব এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে শিল্পকলা একাডেমিতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ঘোষণা দেন, বাংলা বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানকে এবার সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু ইসলামপন্থি কয়েকটি কট্টর সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বর্ষবরণের অনুষ্ঠানকে ‘অনৈসলামিক ও হিন্দুয়ানি’ আখ্যায়িত করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি ওলামা লীগও ওই দাবিতে একাট্টা।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’ এর আদলে তৈরি ভাস্কর্য সরানোর প্রতিশ্রুতি দিলে বিভিন্ন বাম সংগঠন এর সমালোচনা করে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে ‘মিতালি করা’ আত্মঘাতী হবে বলেও সতর্ক করা হয় সরকারকে।
এরপরও কেন আওয়ামী লীগ পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা বাতিল করেছে, তার ব্যাখ্যায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত। আমরা চিন্তা করেছি, এ ধরনের শোভাযাত্রায় জনগণের ভোগান্তি হয়। বহুদিন ধরে কোনো ধরনের র্যালি করার পক্ষে আমরা নই।”
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে ফেরার দিন আওয়ামী লীগের সংবর্ধনার আয়োজন বাতিল করার কথা মনে করিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের।
“আমাদের নেত্রীর সংবর্ধনার বড় ধরনের আয়োজন… নেত্রী জানালেন, ‘জনগণকে ভোগান্তি দিয়ে আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই’। একই কারণে আমরা শোভাযাত্রাও বাতিল করেছি। আমরা গণভবনে নেত্রীর সঙ্গে বৈশাখী উৎসব পালন করব।… বাইরে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয়।”