প্রতিবেদক: সরকারি সিদ্ধান্তকে নগরবাসীর কাছে দুঃসহ করে তুলতে সড়কে বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন মালিকরা। তাই সিটিং সার্ভিস বন্ধের দ্বিতীয় দিনও প্রথম দিনের মতোই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সোমবার রাজধানীর রাজপথে স্বাভাবিকের তুলনায় কম সংখ্যক বাস নামিয়েছেন মালিকরা। রাজধানীর শ্যওড়াপাড়ার থেকে গুলশান-১ যাওয়ার জন্যে বাসের অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রবিন। তিনি বলেন, সাধারণত প্রতি ১০ বা ২০ মিনিট পর পর বিহঙ্গ কোম্পানির একটি বাস আসে। কিন্তু আজ আধ ঘণ্টাতেও বাস নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে বাসের সংখ্যা রোববারের মতই কম। ‘সিটিং সার্ভিস’ ব্যবস্থা উঠে গেলেও বিভিন্ন রুটের বাসে এখনও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ এপ্রিলের পর থেকে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের ঘোষণা দেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এরপর শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধে রোববার থেকে অভিযান চালানো হবে।
রোববার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরুর পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা-মারামারির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন স্থানে। অনেক মালিক রাস্তায় গাড়ি না ছাড়ায় যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান সোমবার বলেন, কোনো পরিবহন কোম্পানি তাদের গাড়ি বন্ধ রাখলে রুট পারমিট বাতিল করে দেওয়া হবে।
“তারা গাড়ির রুট পারমিট নিয়েছে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য। এখন যদি কেউ গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।”
কিন্তু সোমবারও বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বাসের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। বাস না পেয়ে বিভিন্ন মোড়ে যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। নারী যাত্রীদের ভুগতে হচ্ছে অনেক বেশি।
এক মহিলা যাত্রী বলেন, “গাড়িতে উঠতে পারতেছি না। গাড়ি যে কয়টা আসছে পুরুষ যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠল, আমরা আর উঠতে পারি না।”
যমুনা ফিউচার পার্কের দোকান কর্মচারী আনিসুর রহমান জানান, কাজে যাওয়ার জন্য সকালে পূরবী থেকে অছিম পরিবহনের বাসে ওঠেন তিনি। রোববার তার কাছ থেকে ‘সিটিং ভাড়া’ ২৫ টাকা নেওয়া হলেও সোমবার ‘লোকাল ভাড়া’ ১৮ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস কম থাকায় ভোগান্তি ঠিকই হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের কথা-কাটাকাটির ঘটনা চোখে পড়েছে সোমবারও।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালশী মোড়ে গ্যালাক্সি পরিবহনের চালকের সহকারী যাত্রীদের সঙ্গে বিতণ্ডার পর গাড়ি থেকে নেমে যান। এ অবস্থায় যাত্রীভর্তি বাসের চালকও সহকারী ছাড়া যেতে অস্বীকৃতি জানান।
বাসের চালক রাসেল মিয়া বলেন, “মিরপুর ১১ নম্বর থেকে কাকশীর ভাড়া ১৮ টাকা। কিন্তু কেউ ১০ টাকা দেয়, কেউ ১৫ টাকা দেয়। হেলপারকে মারার পর হেলপার পালাইছে, আমি কেমনে যাব?”
পরে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে ইসিবি চত্বর থেকে ভাড়ার চার্ট নিয়ে সে অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের রফা করলে বাস গন্তব্যে ছেড়ে যায়।