প্রতিবেদক: শনির হাওরের পর এবার সুনামগঞ্জের পাকনার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
সোমবার ভোরে গজারিয়া পয়েন্টে ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এরপর পানিতে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদুল হক জানান, পানির প্রবল বেগ থাকায় কৃষকেরা শত চেষ্টা চালিয়েও বাঁধটি রক্ষা করতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, সুনামগঞ্জের সবগুলো হাওরের ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে গেলেও শনির ও পাকনার হাওরে এতদিন আঘাতটা লাগেনি।
রবিবার ভোরে সুনামগঞ্জের শনির হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। এতে হাওরের ৪০ শতাংশ জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়। সোমবার ডুবে গেল পাকনার হাওর।
পাকনার হাওরে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। জামালগঞ্জ উপজেলার সদর, ভীমখালী ও ফেনারবাক ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের মানুষের জমি আছে এই হাওরে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরে বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে পড়লে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার কাজে যোগ দেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় বাঁশ, বস্তা ও চাটাই দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। বাঁধে দিনরাত কাজ করেন তাঁরা। ব্যবস্থা করা হয় বাঁধ পাহারার। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।
পাকনার হাওর পাড়ের ভীমখালী গ্রামের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কী আর করব। আমাদের সব শ্রম ব্যর্থ হয়ে গেল। চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে সোনার ধান। আমরা অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছি। অনেকেই কান্নাকাটি করছেন।’ ফেনারবাক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শেষ ভরসা ছিল এই হাওর। সেটিও তলিয়ে গেল। আমাদের আর কোনো হাওর রইল না। মানুষজন আহাজারি করছেন।’
ভীমখালী গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। হাওরে আমার চার একর জমি ছিল। মনে করেছিলাম, এই ফসল কাটতে পারব। আর একটা সপ্তাহ সময় পেলেই হতো। কিন্তু তা আর হলো না।’
জামালগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘হাওরটি রক্ষায় এলাকার মানুষ এত শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। কিন্তু সবার চেষ্টা, শ্রম ব্যর্থ করে দিয়ে এখন হাওরটি তলিয়ে যাচ্ছে। এই হাওরে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি আছে। হাওরে যেভাবে পানি ঢুকছে, এতে মনে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব ধান তলিয়ে যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ইতিমধ্যে ছোট-বড় ১৪২টি হাওরের ফসলহানি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই হাওর আমাদের শেষ ভরসা ছিল। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসী, ইউএনওসহ কয়েক শ মানুষ ছিল। প্রবল বৃষ্টি থাকায় সকালে আবার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই খবর এল বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল পানির চাপে বাঁধ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।’