1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

আবৃত্তি শিল্পী কাজী আরিফকে রাষ্ট্রীয় সম্মান

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭
  • ৯৯ বার

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র চাকমার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেন।

এর আগে শহীদ মিনারে বেদিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন-প্রতিষ্ঠানসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো এই বাচিক শিল্পীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও কাজী মদীনা, আবৃত্তি ও অভিনয়শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যয়, আবৃত্তিকার ভাষ্কর বন্দোপাধ্যয় ও আশরাফুল আলম এসময় উপস্থিত ছিলেন।

গত শনিবার নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাজী আরিফ। ৬৫ বছর বয়সী এই স্থপতি হৃৎযন্ত্রের নানা জটিলতা ভুগেছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তার কফিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়, সেখান থেকে নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতিমন্ত্রী নূর তার সতীর্থ আবৃত্তিকার কাজী আরিফ ‘রাষ্ট্রীয় কোনো পদক পেতে পারেন কি-না তা বিবেচনায় রাখা হবে’ বলে জানান।

শিল্পীর স্মৃতিচারণ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আবৃত্তিকে শিল্প হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যারা আশির দশক থেকে সংগ্রাম করে আসছিলেন তাদের মধ্যে প্রথম সারির সৈনিক ছিলেন কাজী আরিফ। তিনি আবৃত্তির মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের কথা বলতেন। অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন ভূমিকা পালন করেছেন।”

আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরিফের মরদেহ শ্রদ্ধা জানান।

কবিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজী আরিফের ‘অগ্রণী ভূমিকার’ প্রশংসা ঝরেছে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফের কণ্ঠে।

তিনি বলেন, “আবৃত্তির মতো একটি শিল্পকে সমষ্টিগত শিল্পে পরিণত করে গেছেন কাজী আরিফ।”

ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জাসদ, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় জাদুঘর, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, স্থপতি ইনস্টিটিউট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের শিল্প আন্দোলনে কাজী আরিফ ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে থাকবেন’ বলে মূল্যায়ন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের, যিনি ক্যাসেট আকারে কাজী আরিফের প্রথম আবৃত্তি অ্যালবাম ‘পত্রপুট’ বের করেছিলেন।

অ্যালবাম বের করার স্মৃতিচারণ করে হাসান আরিফ বলেন, “আবৃত্তির ক্ষেত্রে তিনি তখন একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। আমার বিশ্বাস, মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে জেগে ওঠা এই নতুন মানুষটিকে রাষ্ট্র ও সমাজ নতুনভাবে মূল্যায়ন করবে।”

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রয়াতের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে, সেখানে বাদ জোহর প্রথম জানাযা হয় তার।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মেয়ে অন্তরা বিনতে আরিফ সাংবাদিকদের জানান, বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজা শেষে তার ধানমণ্ডির বাসায় নেওয়া হবে।

পারিবারিক সিদ্ধান্তে পরদিন বুধবার বিকাল তিনটায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শিল্পীকে দাফন করা হবে জানান অন্তরা।

কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ী সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা, রাজনীতি ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হাতেখড়ি সেখানেই। আবৃত্তির পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি, সক্রিয় ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে।

কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত কাজী আরিফ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে বুয়েটে লেখাপড়ায় ফেরেন কাজী আরিফ। সমান তালে চলতে থাকে তার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

১৯৭৩ সালে প্রথম বিটিভি ও বেতারে আবৃত্তি করলেও কাজী আরিফের প্রথম অ্যালবাম ‘পত্রপুট’ বের হয় ১৯৮০ সালে। মোট ১৭টি কবিতার অ্যালবাম বেরিয়েছে তার।

মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরিফ বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

রেডিও, টেলিভিশনে নিয়মিত আবৃত্তি করতেন কাজী আরিফ। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি স্টেটে, থাইল্যান্ডে তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়েছে। কলকাতায় বিভিন্ন আসরেও তিনি আবৃত্তি করেছেন।

আবৃত্তির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুরস্কারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের দেওয়া ফোবানা পুরস্কার এবং কলকাতা থেকে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন কাজী আরিফ।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog