প্রতিবেদক: এবার ‘সাড়ে ১২ প্রোটিনের’ গম আমদানি করা হচ্ছে এর বাইরে কোনো গম আনা হবে না উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, এবার খাদ্য মন্ত্রণালয় যে চাল ও গম সংগ্রহ করছে, তার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না।
বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী এই দাবি করেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, অতি সম্প্রতি চালের দাম বাড়ায় সংসদ সদস্যরা তাঁর প্রতি বিষোদ্গার করেছেন। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিদেশে চাল রপ্তানির যোগ্যতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে, সেটা ঠিক। তবে এবার হাওরে আগাম বন্যায় প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে আরও কিছু জায়গায় ফসল নষ্ট হয়েছে। আর এবার ফলনও কিছু কম হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে চালের দাম বাড়িয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোনো রকম সংকট নেই। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের মজুত নিয়ে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল দ্রুত আসবে। এ ছাড়া টেন্ডারে আরও চার লাখ মেট্রিক টন চাল আসবে।
কামরুল ইসলাম বলেন, তিনি গত এপ্রিলে আবেদন করেছিলেন আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য। কিন্তু সেটি তখন করা হয়নি। এর কারণ, প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করেছেন কৃষকদের বাঁচতে হবে। তাঁদের উৎপাদন খরচ উঠে আসতে হবে। কিন্তু তখন শুল্ক কমালে চালের দাম পড়ে যেত।
ভিজিএফ কর্মসূচি তুলে দেওয়া উচিত মন্তব্য করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁদের একেবারে কিছুই নেই, তাঁদের দেড় শ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এরপর ভিজিএফের কী প্রয়োজন থাকতে পারে?
এর আগে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ মঞ্জুরি দাবির বিরোধিতা করে বলেন, খাদ্যমন্ত্রী রাজনীতিতে সফল হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছেন। শৃঙ্খলার অভাবে চালের দাম বেড়েছে। নিজেকে কৃষক দাবি করে ফিরোজ রশীদ বলেন, হাওরে ফসল নষ্ট হওয়ার ফলে সংকট হওয়ার কথা কার্তিক মাসে। কিন্তু এখনই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমদানি শুল্ক আরও আগে কমানো হলে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ পেতেন না।
বিরোধী দলের ফখরুল ইমাম বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘মেয়েদের বড় গুণ তারা শোনে তিন লাইন, বোঝে ১৩ লাইন আর লেকচার দেয় ৯৩ লাইন।’ তাঁর এই বক্তব্যে তীব্র আপত্তি জানান নারী সাংসদেরা। পরে তিনি তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, গুদাম থেকে চাল বের করতে হবে। তিনি বিভিন্ন বিদেশি ফল দেশে চাষের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
রওশন আরা মান্নান বলেন, এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আনা পচা গম খেয়ে পুলিশের অনেক সদস্য অসুস্থ হয়েছিলেন।
স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা কেটে গেছে। এখানে সমস্যা করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। যেহেতু চালের দাম বেড়েছে এবং মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে, তাই দেখতে হবে চালের মূল্য যেন কমানো যায়।
জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। হঠাৎ চালের দাম বাড়ল কেন, চালের মজুত কত থাকার কথা, থাকল না কেন—এসব খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পচা গমও হজম করলাম। চালের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের পকেট থেকে অনেক টাকা চলে গেল, এটা দেখা দরকার।’
জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যথাযথ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তিনি খাদ্য ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার দাবি জানান।