প্রতিবেদক: হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
আসামিদের মধ্যে সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরখাস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ রোববার সুনামগঞ্জ সদর থানায় এই মামলা করেন বলে কমিশনের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণবকুমার ভট্টাচার্য জানান।
আসামিদের তালিকায় সিলেট বিভাগীয় পাউবো এবং সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।”
গত মার্চের শেষ দিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিকে দায়ী করে ঢাকায় মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশও হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ক্ষতির শিকার হয় আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, বাঁধ নির্মাণে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জের মিঠামঈন থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও সে সময় হেলিকপ্টারে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।
এই প্রেক্ষাপটে হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে দুদক। দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। তারা ওই এলাকায় গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
তদন্ত চলার মধ্যেই সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আব্দুল হাই এবং সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ৪ মে পাউবোর মহাপরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদকের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই সংস্থার প্রচণ্ড গাফিলতির প্রমাণ তারা পেয়েছেন।