প্রতিবেদক: বিশিষ্ট কবি, কলামিস্ট, প্রবন্ধকার এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহারকে ফরহাদ মজহারকে ডিএমপির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে তাকে যশোহরের নোয়াপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে খুলনায় নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে র্যাব ও পুলিশ দাবি করে।
ডিএমপির কাছে হস্তান্তের আগে খুলনা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দিদার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ফরহাদ মজহার অপহরণের শিকার হননি, তিনি স্বেচ্ছায় ভ্রমণে ছিলেন বলে তাদেরকে জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার সকালে রাজধানীর শ্যামলী থেকে অপহৃত হন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে তার পরিবার।
পুলিশ ও র্যাবের ভাষ্য মতে, সোমবার রাত সোয়া ১১ টার দিকে যশোরের নোয়াপাড়া এলাকায় খুলনা হতে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের ৫০৫ নম্বর বাস থামিয়ে ফরহাদ মজহারকে পুলিশ ও র্যাব উদ্ধার করে।
উদ্ধারের পর তাকে অভয়নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ব্যাপারে র্যাব -৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে যশোরের নোয়াপাড়া এলাকায় তল্লাশি করে রাত সোয়া ১১ টার পর সুস্থ অবস্থায় ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নোয়াপাড়া থেকে খুলনায় নিয়ে আসা হয়।
সকাল ১০টার দিকে তার পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে জানান, বিশিষ্ট কবি, কলামিস্ট, প্রবন্ধকার এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহারকে সোমবার ভোর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে একটা ফোন পেয়ে ঢাকার শ্যামলীর নিজের বাসা থেকে বের হয়ে যান ফরহাদ মজহার।
তাদের পারিবারিক বন্ধু রেজাউর রহমান লেনিন বলছিলেন পরে বেশ কয়েক বার ফরহাদ মজহার ফোন করেছেন স্ত্রী ফরিদা আখতারের মোবাইলে।
বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবার ২০ মিনিট পর প্রথম ফোনটা করেছেন ৫টা ২২ মিনিটে। সেই ফোনে সে ফরিদা আখতারকে বলেন ‘আমাকে বাঁচান, টাকাপয়সা রেডি করেন নাহলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’।
এরপরে দুপুর তিনটা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ফোন এসেছে ও ফরহাদ মজহার নিজেই কথা বলেছেন। শেষ যখন উনি কথা বলেন তখন জানতে চেয়েছেন টাকা পয়সা জোগাড় হয়েছে কিনা।
পরিবার দাবী করছে অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে ফরহাদ মজহারের কাছে। মজহার তার পরিবারকে মুক্তিপণের এই অর্থের কথা জানিয়েছেন।
কিন্তু ওই সময় মজহার ফোন করলেও তার আশপোশে যে লোক ছিল তা পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরেছেন।
সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফরহাদ মজহারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে কল করে স্ত্রী ফরিদা আক্তারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। সাংবাদকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম।
এদিকে পুলিশ বলছে শ্যামলীর ঐ বাসার সিসিটিভি ফুটেজে তারা দেখেছেন মজহার একা স্বাভাবিকভাবেই বাসা থেকে বের হয়ে যান।
তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার বিপ্লব সরকার বলেন, এরপর কী ঘটেছে সেটা তাদের কাছে এখনো রহস্য।
অপহরণ করা হয়েছে এমন তথ্য দিয়ে আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।
এদিকে বিকেল থেকেই ফরহাদ মজহারের সন্ধানে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ইবরাহিম মিয়া সড়কের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালায় আইনশৃংখলা বাহিনী।
র্যাব ট্র্যাকিং করে ওই সড়কে ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোনের অবস্থানের কথা জানতে পেরে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে এ অভিযান শুরু করে বলে জানা যায়।
অভিযানের এক পর্যায়ে ওই সড়ক থেকে একটি পরিত্যক্ত মাইক্রোবাস উদ্ধার করে র্যাব।
আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান, বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা বেশ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালালেও কোনো বাড়িতে ফরহাদ মজহারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব জানায় তাকে যশোহরের নোয়াপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর তাকে খুলনায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ফরহাদ মজহারের পরিবারের অভিযোগ, সোমবার ভোরে মোহাম্মদপুর আদাবরের ‘হক গার্ডেন’র নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয়।
আদাবর থানার ডিউটি অফিসার আলেয়া বেগম জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করা হলে পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আদাবর থানার পুলিশ সদস্যরা তার ফ্ল্যাট পরিদর্শন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরহাদ মজহারের ঘনিষ্ঠ ও চিন্তা পাঠচক্রের অন্যতম এক সমন্বয়ক বলেন, ‘কবি ফরহাদ মজহারকে সোমবার ভোরে রাজধানীর শ্যামলী থেকে অপহরণ করা হয়। তিনি বাসা থেকে ভোর পাঁচটার দিকে বের হন। পরে সাড়ে পাঁচটার দিকে স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন- ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’। এরপর ফরহাদ মজহারের ফোন বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘পরে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে একই নম্বর থেকে ফোন করে ফরিদা আখতারের কাছে ৩৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এভাবে কয়েকবার ফোন করা হয়। পরে ফরহাদ মজহারকে অপহরণের বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়।’