আমি হব সকালবেলার পাখি, সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি —ছেলেবেলায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই কবিতাটি পড়েননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু বড়বেলায় এসে আমরা কজনই-বা পারছি সকালবেলার পাখি হতে? সকালবেলার পাখি না, তারপরও আমরা অনেকেই চাই আবার সকালবেলার পাখি হতে। কেননা, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করা যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি এটি সময়ের কাজ সময়ে করতেও বেশ সহায়তা করে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই রাতে দেরি করে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাসটি বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বিভাগের অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী। তিনি বলেন, ঘুমানোর আয়োজন মানেই শুধুই ঘুমানোর জন্য তৈরি হওয়া। ঘুমোতে গিয়ে বই পড়া, গান শোনা বা অফিসের কাজ করা উচিত নয়।
যেকোনো ধরনের খাবারই ঘুমোতে যাওয়ার ন্যূনতম তিন ঘণ্টা আগে খেয়ে নিতে হবে। এতে খাবার হজমের প্রক্রিয়াটি ঘুমোতে যাওয়ার সময় ব্যাঘাত ঘটাবে না। শুধু তা-ই নয়, ঘুমানোর জায়গাটি হতে হবে শান্ত ও অন্ধকার।
ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস কীভাবে?
জলদি ঘুমানোর অভ্যাস
জলদি ঘুম থেকে ওঠার জন্য অবশ্যই জলদি ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সাধারণত নতুন কোনো অভ্যাস রপ্ত করতে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। তাই নতুন অভ্যাস রপ্ত করতে হলে প্রথমেই দরকার ধৈর্য। প্রথম প্রথম আগের সময়ের চেয়ে এক ঘণ্টা কিংবা আধা ঘণ্টা আগে ঘুমোতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রথম দিকে ঘুম নাও আসতে পারে, তবে কয়েক দিন পরেই দেখবেন নতুন সময়ে আপনার ঘুম পাচ্ছে। এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে আনুন আপনার ঘুমোতে যাওয়ার সময়।
ঘুমের ওষুধকে ‘না’
যাঁদের ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা আছে বা ঘুমের ওষুধ খেতে হয়, তাঁদের চেষ্টা করতে হবে ঘুমের ওষুধ পরিহার করা। যদি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ নিতে হয় সে ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ নিন। অপর দিকে, যদি আপনি ঘুম হয় না তাই নিজ থেকেই ওষুধ নিয়ে থাকেন, তবে চেষ্টা করুন ঘুমের ওষুধ না খেতে। এ ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন দুপুরে ঘুমিয়ে নিতে। তবে যদি দুপুরে ঘুমানোর সুযোগ না থাকে তাহলে চেষ্টা করুন দুপুরে একটু ভারী খাবার খেতে এবং রাতের খাবারের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কম খেতে। এটি যেমন শরীরে ব্যালান্স করবে, তেমনি শরীরকে ঘুমের জন্য তৈরি করবে।
জলদি ঘুমিয়ে পড়া তবে বেশি ঘুম নয়
জলদি ঘুম থেকে ওঠার জন্য জলদি ঘুমিয়ে পড়া জরুরি, যেন শরীর সঠিক মাত্রায় বিশ্রাম পায়। তবে তাই বলে, বেশি ঘুমের জন্য বেশি জলদি ঘুমিয়ে পড়া যাবে না। সাত ঘণ্টার বেশি রাতের ঘুম শরীরে ঝিমুনি ভাব এনে দিতে পারে।
সুন্দর হোক সকাল
আমি কেন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠব?—সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার জন্য নিজস্ব কিছু কারণের পাশাপাশি লক্ষ রাখুন আপনার সকালটা যেন সুন্দর হয়। ঘুম থেকে উঠেই আপনার প্রিয় কফি কিংবা পত্রিকাটি যেন আপনার বেড সাইড টেবিলে পান অথবা সূর্যের প্রথম কিরণ যেন আপনার শোবার ঘরে পড়ে, সেটি নিশ্চিত করুন। এটি যেমন আপনাকে ফুরফুরে মেজাজে কাজ শুরু করতে সাহায্য করবে, সেই সঙ্গে আপনাকে প্রতিদিন সকালে জলদি ঘুম থেকে উঠতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
বেরিয়ে পড়ুন সকালে
সকালে ওঠার ক্ষেত্রে যদি কোনো উপায়ই কাজে না আসে সে ক্ষেত্রে কাজের ছকটিই তৈরি করুন সকালের কথা মাথায় রেখে। যদি আপনি শিক্ষার্থী হন এবং আপনার যদি ক্লাসের সময় পছন্দ করার সুযোগ থাকে, তবে চেষ্টা করুন সকালের ক্লাসগুলো নিতে; যদি আপনি চাকরিজীবী হন, তবে চেষ্টা করুন সকালেই অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়তে এবং গাড়ির পরিবর্তে কিছুটা পথ হেঁটে যেতে; যদি আপনি একজন ব্যবসায়ী কিংবা ভ্রমণপিপাসু হন, তবে চেষ্টা করুন আপনার মিটিংগুলো সকালের দিকে রাখতে অথবা যদি ভ্রমণপিপাসু হন, তবে আপনার গন্তব্যের জন্য ট্রেন, প্লেন বা লঞ্চের সকালের টিকিট কাটুন।