উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে দীর্ঘ ১১ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সফরে ট্রাম্প জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে যাবেন। তার এ সফর চলবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
গত ২৫ বছরে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য এটাই হবে দীর্ঘতম এশিয়া সফর। এর আগে ১৯৯১ সালের শেষ ও ১৯৯২ সালের শুরুতে দীর্ঘ এশিয়া সফরে আসেন জর্জ ডব্লিউ বুশ।
সফরে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে জোটবদ্ধতা তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার আগে শুক্রবার ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াইতে পৌঁছান। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের একটি ব্রিফিংয়ে অংশ নেন ট্রাম্প।
এখান থেকে তার পার্ল হার্বারে ১৯৪১ সালে জাপানি বোমাবর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের নিহত নৌসেনাদের স্মরণে নির্মিত ইউএসএস অ্যারিজোনা মেমোরিয়াল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল।
শনিবার হাওয়াই থেকে ট্রাম্প দম্পতি জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখান থেকে তারা দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন।
দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে ট্রাম্প ডিমিলিটারাইজড্ জোন (ডিএমজি) নামে পরিচতি দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন না; গত সপ্তাহেই তার সহকারীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। সেখানে না গেলেও সিউলের দক্ষিণে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রিতে যাবেন তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তিনি চীনের রাজধানী বেইজিং যাবেন। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন ট্রাম্প। বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে তিনি শিকে চাপ দিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেইজিং থেকে ট্রাম্প ভিয়েতনাম যাবেন। ভিয়েতনামের ডানাংয়ে তিনি ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনোমিক কো-অপারেশন’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিবেন। পরে রাষ্ট্রীয় সফরে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে যাবেন।
সফরের শেষ পর্যায়ে তিনি ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলা যাবেন। ম্যানিলায় ‘অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়া ন্যাশন্স’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে ১৪ নভেম্বর তার এশিয়া সফর শেষ হবে।
শুক্রবার সফরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন তিনি ফিলিপিন্সে অতিরিক্ত একদিন থাকবেন।
ট্রাম্পের এ সফর যে খুব সুখকর হবে তেমনটা মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা। সফরে তিনি এমন কিছু দেশে যাবেন যাদের সঙ্গে তার রয়েছে টানাপোড়েনের সম্পর্ক। তাই এ সফর তার জন্য সত্যিকার অর্থেই দর-কষাকষি ও কূটনৈতিক দক্ষতা যাচাইয়ের এক পরীক্ষা হবে বলেই ধারণা তাদের।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার নানা উসকানিমূলক পদক্ষেপের লাগাম টেনে ধরতে ও কর্মসূচি থেকে পিছু হটতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সফরে ওই সব দেশের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চালাবেন ট্রাম্প।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলারের চলা তদন্তে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সাবেক ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট অভিযুক্ত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন পর ট্রাম্প এই সফর শুরু করলেন।
সফরের লক্ষ্যে শুক্রবার সকালে হাওয়াই থেকে বিমানে ওঠেন ট্রাম্প। পরে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং করার জন্য সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া নিয়ে সৃষ্ট সংকট ও হুমকিতে পড়া ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তির প্রেক্ষাপটে নতুন করে আরো বাণিজ্য চুক্তি করার মতো ক্ষেত্রে এ সফর ট্রাম্পের জন্য হবে দর-কষাকষি ও কূটনৈতিক দক্ষতা প্রমাণের এক পরীক্ষা।