গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই একটি বিতর্ক বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। নির্বাচনে সত্যিই কি রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল? এক্ষেত্রে টুইটার ও ফেসবুকের ভূমিকাইবা কী? বিতর্কটি আজো অমীমাংসিত। এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের তদন্ত চলমান।
এমনই এক পরিস্থিতিতে ‘প্যারাডাইস পেপারস’ নামে ফাঁস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি নতুন করে বিতর্ক উসকে দিচ্ছে। এসব নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক ও টুইটারে এমন কয়েকটি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে, যাদের সঙ্গে ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন করপোরেশনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। খবর ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
জার্মান দৈনিক জুদডয়চে ছাইতুং সংগৃহীত ও ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) কর্তৃক পর্যালোচনাকৃত প্যারাডাইস পেপারস হলো, বারমুডার একটি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হয়ে যাওয়া ১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথি।
এগুলো পর্যালোচনার পর গতকাল এক বিবৃতিতে আইসিআইজে জানিয়েছে, রাশিয়ার ভিটিবি ব্যাংক গোপনে ডিএসটি গ্লোবাল নামের একটি বিনিয়োগ তহবিলে ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছিল। রুশ ধনকুবের ইউরি মিলনারের মালিকানাধীন তহবিলটি ২০১১ সালে টুইটারের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনতে এ অর্থ ব্যয় করেছিল।
উল্লেখ্য, ভিটিবি ব্যাংকে রাশিয়ার ফেডারেল এজেন্সি ফর স্টেট প্রপার্টি ম্যানেজমেন্টের ৬০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে, যেটি দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের একটি সাবডিভিশন।
শুধু টুইটারই নয়, ফেসবুকের সঙ্গেও রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির আর্থিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। আইসিআইজে জানিয়েছে, ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের একটি সাবসিডিয়ারি এমন একটি অফশোর কোম্পানিতে তহবিল জোগান দেয়, যারা ডিএসটি গ্লোবালের সঙ্গে মিলে ফেসবুকে মোটা অংকের বিনিয়োগ করেছিল। ২০১২ সালে ফেসবুক ও ২০১৩ সালে টুইটার আইপিও ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যেই মিলনার ও সহবিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেন। এর মাধ্যমে মোটা অংকের মুনাফা বাগিয়ে নেন তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্রেমলিনের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল কিনা, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু এর ঢের আগে থেকেই যে মার্কিন সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের সঙ্গে রাশিয়ার আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে, ফাঁসকৃত নথিগুলোই তার প্রমাণ।
এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ফেসবুক ও টুইটার উভয়েই জানিয়েছে, মিলনারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার পরই তারা তাতে সাড়া দিয়েছে। আর আইসিআইজের এক প্রশ্নের জবাবে মিলনার জানিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠান যেসব বিনিয়োগ করেছে (ফেসবুক ও টুইটারের সঙ্গে চুক্তিসহ), তার সবই ব্যবসায়িক গুরুত্বের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো বিষয় প্রাধান্য পায়নি।