1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

মাংসপেশিতে আঘাত পেলে

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৩৭২ বার

মাংসপেশির আঘাত অর্থ হল মাংসপেশি ছিঁড়ে যাওয়া, টান খাওয়া বা আঘাতের জন্য রক্ত জমাট বাঁধা। ফুটবলার মেসি যখন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন, তার অর্থই হল মাংসপেশির আঘাত। এ আঘাত খুবই বিরক্তিকর। কারণ একজন খেলোয়াড়কে অনেক দিন খেলা থেকে দূরে রাখে।
স্পোর্টস ইনজুরির ১০-৩০ শতাংশ হল মাংসপেশিতে আঘাত। ফুটবলারদের ইনজুরির ৩০ শতাংশ হল মাংসপেশিতে আঘাত। মাংসপেশিতে আঘাত হয় সরাসরি আঘাতের জন্য অথবা অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য মাংসপেশির ফাইবার বা তন্তু ছিঁড়ে যাওয়া।

এ রক্ত জমাট বাঁধা দুইভাবে হতে পারে-

* মাংসপেশির ভেতরে

* মাংসপেশির মধ্যবর্তী স্থানে

যখন মাংসপেশিকে এমন কাজ করতে হয়, যা মাংসপেশির স্বাভাবিক ক্ষমতার চেয়েও বেশি, তখনই এ অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। টান খেলে সাধারণত সেসব মাংসপেশি ছিঁড়ে যায়, যারা দুটি জয়েন্টের মাঝে থাকে। যেমন- হ্যামস্ট্রিং, বাইসেপস ইত্যাদি।

মাংসপেশি ছেঁড়া গুরুত্ব অনুসারে তিন প্রকার-

প্রথম ৫ শতাংশ মাংসতন্তু ছিঁড়ে যায়। অস্থিসন্ধি নাড়াতে ব্যথা হবে এবং জয়েন্টের শক্তিও কম থাকবে। দ্বিতীয় ৫ শতাংশের অধিক মাংসতন্তু ছিঁড়ে যায়। অস্থিসন্ধি নাড়াতে ব্যথা হবে এবং শক্তিও কম থাকবে। তৃতীয় সম্পূর্ণ মাংসপেশি ছিঁড়ে যায়।

এক্ষেত্রে লক্ষণ হচ্ছে-

* মাংসপেশিতে ব্যথা হবে।

* মাংসপেশিতে নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়বে এবং বিশ্রামে ব্যথা কমবে।

পার্শ্বিয়াল বা আংশিক ছেঁড়াতে একটা গর্ত পাওয়া যাবে এবং সম্পূর্ণ ছেঁড়াতে মাংস ফুলা থাকবে। পাশ্বিয়াল ছেঁড়াতে ব্যথার জন্য নাড়াতে পারবে না এবং সম্পূর্ণ ছেঁড়ার কারণে সে অংশ নাড়াতে পারবে না। আঘাতের স্থানের রং পরিবর্তন হবে ও ফুলে যাবে।

মাংসপেশিতে রক্ত জমাট বাঁধা

* খেলাধুলার সময় মাংসপেশিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়।

* আঘাতে এ মাংসপেশিতে কী পরিমাণ রক্তক্ষরণ হবে তা নির্ভর করবে কী পরিমাণ রক্ত মাংসপেশিতে চলাচল করছিল এবং এই মাংসপেশি কেমন টানে ছিল।

* আঘাতের পরবর্তী ফলাফল নির্ভর করবে কোথায় এবং কী পরিমাণ আঘাত পেয়েছিল- মাংসপেশির ভেতরে নাকি মাংশপেশির মধ্যবর্তী স্থানে।

রক্তক্ষরণ মাংসপেশির ভেতরে ছিঁড়ে যাওয়া বা চাপের কারণে হতে পারে।

জমাট রক্ত মাংসপেশির ভেতরে চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়।

মাংসপেশিতে ব্যথা ও কার্যকারিতা কমে যায়।

মাংসপেশির মধ্যবর্তী স্থানে রক্তক্ষরণ হয়ে পার্শ্ববর্তী রক্তনালি যখন ছিঁড়ে যায় একটা ফোলাভাব তৈরি হয় রক্ত জমাট রাখার জন্য। সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর এ সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে মাংসপেশীর কার্যকারিতাও তেমন হারায় না। সহজে আরোগ্য লাভ হয়।

যে কারণে মাংসপেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়-

* পর্যাপ্ত পরিমাণ ওয়ার্মআপ না হলে

* আগেই মাংসপেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল, যা পরিপূর্ণ চিকিৎসা হয়নি

* আগে আঘাতপ্রাপ্ত মাংসপেশি, যা স্কার টিস্যু দিয়ে সেরেছে

* অতিরিক্ত ব্যবহৃত বা অবসন্ন মাংসপেশি

* টেন্স মাংসপেশি, যা সম্পূর্ণরূপে নড়াচড়া করা যায় না।

* অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় থাকা মাংসপেশি, যাকে স্বাভাবিক সম্প্রসারণ করা যায় না।

চিকিৎসা-

চিকিৎসা, সুস্থতা ও পুনর্বাসন নির্ভর করে কোনো ধরনের, কী পরিমাণ এবং কোথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তার ওপর।

আঘাতপ্রাপ্ত মাংসপেশিতে রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য নিন্মলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন-

* বিশ্রাম

* ঠাণ্ডা সেঁক

* ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ

* আহত অঙ্গ উঁচুতে রাখবেন

* আহত অঙ্গ কোনো ধরনের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে (প্রয়োজনে ক্র্যাচ/অ্যালবো ব্যাগ ব্যবহার করবেন)

* ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর নিন্মলিখিত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

* ফোলা কমে গেছে কি না

* ফোলা ছড়িয়ে পড়েছে কি না

* আঙ্গুল নাড়াতে পারছেন না।

এই সময় রোগ নির্ণয় জরুরি। যদি মাংসের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয় অথবা সম্পূর্ণ মাংসপেশি ছিঁড়ে যায় তখন। সম্পূর্ণ চিকিৎসার আগে ব্যায়াম শুরু করলে স্থায়ী ক্ষতির আশংকা থাকে। যদি অল্প আঘাত হয়, তাহলে ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ, গরম সেঁক ও ব্যায়াম করলেই সেরে যায়।

* পরবর্তীতে স্টটিক এক্সারসাইড ও কোঅডিনেশন ট্রেনিং করতে হবে।

* ধীরে ধীরে কাজের গতি ও পরিমাণ বাড়াতে হবে।

* খেলার ধরন অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

যদি আশানুরূপ উন্নতি না হয় তবে বুঝতে হবে মাংসের ভেতরে ছিঁড়েছে। এখনই সার্জারি করতে হবে যখন-

* জমাট রক্ত বের করার প্রয়োজন হয়।

* ছেঁড়া মাংসপেশি জোড়া লাগাতে, ফলে স্কার টিস্যু কম তৈরি হবে।

পুনর্বাসন

অপারেশনের পর কখন ব্যায়াম ও কাজ শুরু করবে তা নির্ভর করে কোনো মাংসপেশি এবং কত গভীরভাবে ছিঁড়েছে তার ওপর। যত আগে ব্যায়াম ও পুনর্বাসন শুরু করবে তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।

যখন মাংসপেশির সঙ্কোচন ও প্রসারণের সময় ব্যথা পাওয়া যায় না, তখন বুঝতে হবে ঘা শুকিয়ে গেছে। যখন মাংসপেশি স্বাভাবিক কাজ ও স্বাভাবিক নড়াচড়া করবে তখন থেকে ট্রেনিং প্রোগ্রাম শুরু করতে পারে। মাংসপেশির আঘাত সারতে ৩ থেকে ১৬ সপ্তাহ লাগে।

কন্ডিশনিং ব্যায়াম ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে।

যত দিন ব্যায়াম করার সময় ব্যথা লাগে ততদিন প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করবেন না।

মাংসপেশির আঘাত থেকে মুক্তির উপায়-

* পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি।

* খেলার আগে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে।

* অতিরিক্ত গরম, ঠাণ্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া ও উঁচু স্থানে খেলার জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।

* নির্দিষ্ট মাংসপেশির নির্দিষ্ট ব্যায়াম করে প্রতিটি মাংসপেশির সম্প্রসারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

* ব্যায়ামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মাংসপেশির ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

লেখক : কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিক্স ডিপার্টমেন্ট, ইউনাইটেড হসপিটাল

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog