শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ফাঁদে ফেলে কলেজ ছাত্রী এবং গৃহবধুদের ধর্ষণ ও গোপনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সেই লম্পট ছাত্রলীগ নেতা আরিফে হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ থানার ওসি মো. মেহেদি হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার দুপুরে জনৈক ভূক্তভোগী নারী ছাত্রলীগ নেতা আরিফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। আমরা আরিফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী মামলায় অভিযোগ করেন, আরিফ হোসেন একদিন তার (বাদীর) ঘরে ঢুকে বলেন, আমার মোবাইল ফোনে তোমার (বাদীর) অশ্লীল ছবি আছে, আমার কথা না শুনলে তোমার স্বামীকে এই ভিডিও দেখিয়ে তোমার সংসার ভেঙ্গে দিব। এরপর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে আরিফ ধর্ষণ করেন।
এমনকি উক্ত ধর্ষণ দৃশ্য গোপনে ভিডিও ধারণ করে হুমকি-ধামকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ ও কয়েক দফা টাকা আদায় করেন লম্পট আরিফ হাওলাদার, মামলায় অভিযোগ করেন এই নারী।
অভিযুক্ত আরিফ হাওলাদার ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ফেরাঙ্গিকান্দি গ্রামের মিন্টু হাওলাদারের ছেলে, নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় এমএ রেজা ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র।
ভেদরগঞ্জ থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জুন মাসে আরিফকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই সে বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং এলাকায় নানান অপকর্ম শুরু করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গোপনে এক গৃহবধূর গোসলের দৃশ্য ভিডিও করে পরে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে আরিফ। তবে কেবল ওই গৃহবধূ নয়; একইভাবে ফাঁদে ফেলে গৃহবধূ ও কলেজছাত্রীসহ আরো অন্তত ছয় জনকে ধর্ষণ করেছে সে।
স্থানীয়রা আরো জানান, ঘটনা জানাজানির পর এলাকার লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। এতে আরিফসহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়। পরবর্তী সময়ে আরিফকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর এরপরই সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় শামছুল হক রাঢ়ি ও ইব্রাহীম মাদবর বলেন, ‘এই জঘন্য কাজ করার পরও আরিফকে একটি প্রভাবশালী মহল বাঁচাতে চাইছে। আরিফের পক্ষে স্থানীয় ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার কঠিন শাস্তি চাই।’
শুক্রবার বিকালে আরিফের বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই বাসার আশপাশের লোকজন জানান, আরিফের মা কুয়েতে থাকেন। বাবা মিন্টু হাওলাদার পেশায় কৃষক। তিনি এলাকায় আছেন, তবে কাজে বাসার বাইরে রয়েছেন। আর আরিফ কয়েকদিন ধরেই এলাকায় নেই।
ঘটনার শিকার নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে আরিফ তাদের কাছ থেকে নানান সময় মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি ধর্ষণের ভিডিওগুলো গ্রামের মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে লোকলজ্জার ভয়ে তারা নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার শিকার এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় আমি বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় কে এম সাইফুল ইসলাম নামের একজনের আইডি থেকে কয়েকজন নারীর সঙ্গে আরিফ হোসেনের কয়েকটি আপত্তিকর ছবি আপলোড করা হয়।
ওই আইডিতে রাত ৮টা ৪২ মিনিটে ও রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে দুটি ভিডিও আপলোড করেন রাজীব মাদবর নামের এক যুবক।”
সাইফুল ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এ তথ্য পাওয়া যায় বলে ওসি মেহেদি হাসান জানান।
এ ব্যাপারে রাজীব মাদবর ও কে এম সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগ থেকে আরিফ হোসেন হাওলাদারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মহসিন মাদবর বলেন, ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো দুষ্কৃতিকারীর স্থান নেই। এর আগে আরিফকে প্রথমে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কার করেন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশক্রমে আমরা স্থায়ীভাবে তাকে বহিষ্কার করেছি।