‘৫ জানুয়ারির ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসে যে কোনো মূল্যে বিএনপি সমাবেশ করবে’ বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপি নেতা ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে কিছু জানানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘এখনো আমাদেরকে কিছু জানাইনি। এবং অনুমতি না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে যথাসময়ে অবহিত করা হবে।’
সমাবেশে খালেদার উপস্থিতি অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। সমাবেশের অনুমতি পেলে দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে আগামীকালের সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে ওই স্থানে একটি নাম না জানা সংগঠনকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়ে যে নাটক করেছে সেই নাটকটি আসলে গণতন্ত্রের সাথে, জনগণের সাথে মশকরা ছাড়া কিছুই নয়। তবু আমরা এখনো আশা করবো সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে।
রিজভী আরো বলেন, কাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও এখনো অনুমতি পায়নি বিএনপি। তবে অনুমতির জন্য এখনো আশাবাদী বিএনপি।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল এবং নানা মত ও বিশ্বাসের মানুষরা গণতন্ত্র ফিরে পেতে ‘জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’ অবলম্বন করে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্যই দলমত নির্বিশেষে বিএনপি’র ডাকা আগামীকালের ঢাকায় সমাবেশ এবং সারাদেশে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল সফল করতে হবে।
সমাবেশ নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনায় তিনি বলেন, শ্রমিক লীগ নেতাদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয় তারা সাধারণ পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের হুমকি দিচ্ছেন, যাতে আগামীকাল তারা পরিবহন বের না করে। ক্ষমতাসীনদের এসমস্ত বক্তব্য সবই গণবিরোধী হুকুমবাদ প্রতিষ্ঠারই বৈশিষ্ট্য। এসমস্ত বক্তব্য গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সম্পূর্ণরুপে উচ্ছেদ করতে বেআইনী দাপটের আস্ফালন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে-তারাই পরিকল্পিতভাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে একটা অশান্তির পরিবেশ তৈরী করতে চাচ্ছেন। তারা রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সরকারের নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি শুরু করেছে। অতীতে বিএনপির কর্মসচিতে বিশৃঙ্খলা হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। আগামীকালের ৫ জানুয়ারির গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচিও বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বদ্ধপরিকর।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা এখন দেখি যে, একজন ইউএনও এক ব্যাংক ম্যানেজারকে প্রকাশ্যে চড় থাপ্পড় মারছে, পুলিশ শিক্ষকদেরকে পেটাচ্ছে, সহকারী কমিশনার শিক্ষককে লাঞ্ছিত করছে, সংসদ সদস্য শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করাচ্ছে অথবা কোমলমতি শিশুকে গুলি করে গুরুতর আহত করছে, একজন কলেজ শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনকে দিগম্বর করে রাজপথে ঘোরানো হচ্ছে। এগুলো সবই গণতন্ত্রহীণতার ফলে সমাজে সৃষ্ট নৈরাজ্যের উদাহরণ।
সমাবেশের অনুমতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, জনগণ জানে আপনাদের হুকুম ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এক পা ফেলতে পারে না। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টার যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে ক্ষমতাসীনদের সভা সমাবেশ করতে তো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অনুমতি লাগে না। তাহলে আপনার কথায় এটি পরিষ্কার যে, সরকারবিরোধী দলগুলোকে নির্মমতার দ্বারা অবরুদ্ধ করে রাখতেই আপনাদের হুকুমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেন।
রিজভী বলেন, আমি ওবায়দুল কাদেরকে পরিষ্কার বলতে চাই আপনার নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে এবং সংসদ বহাল থাকলে সেই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠ নির্বাচন হবে না। সেটি হবে নির্বাচনের নামে ভোটকেন্দ্রে ভোটারবিহীন নির্বাচন, যা শুধু আপনাদের নিজেদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নাম বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে। জনগণকে বাইরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাইরে রেখে আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না।