1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

যশোর রোডের শতবর্ষী গাছ কাটা যাবে নাঃ হাইকোর্ট

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮
  • ১৭৬ বার

ঐতিহাসিক যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো কাটা যাবে না। এই আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবির লিটনের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। গাছগুলো কেটে ওই সড়ক চারলেনে উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত স্থগিত করে এই নির্দেশ দিয়েছেন তারা।

৬ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ‘যশোর রোড’ হিসেবে পরিচিত যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশের গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরই শুরু হয় সমালোচনা। ভাইরাল হয়েছে এ সড়কের দু’পাশের গাছের ছবিও।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, যশোরের জমিদার কালী পোদ্দার তার মাকে সোজা পথ দিয়ে গঙ্গাস্নানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ৫৮ হাজার কড়ি ব্যয়ে ১৮৪২ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদিয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। আর ৮০ কিলোমিটারের ওই রাস্তার ছায়ার জন্য দু’ধারে কালীবাবু বিদেশ থেকে এনে অতিবর্ধনশীল রেইনট্রির চারা রোপণ করেছিলেন। সেই বৃক্ষগুলো যশোর-বেনাপোল সড়ককে এখনও ছায়া দেওয়ার পাশাপাশি অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর যশোর থেকে কলকাতার মানিকতলা পর্যন্ত এই সড়কটির নামকরণ হয় যশোর রোড নামে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই যশোর রোড দিয়ে লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের সেই ঢল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ নামে একটি কবিতা লেখেন। যুক্তরাষ্ট্রের গায়ক বব ডিলান সেই কবিতাকে গানে রূপ দিয়ে তা গেয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তহবিল সংগ্রহের জন্য।

ইতিহাসের সাক্ষী এই সড়কটি এশিয়ান হাইওয়েতে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। সে লক্ষ্যে সড়কের যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। গত মার্চ মাসে সড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য প্রকল্প অনুমোদন হলে সড়কের দু’পাশের গাছ কেটে ফেলে রাস্তা প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গাছগুলোকে কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি বেশিরভাগ মানুষ। এ নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার হলে সড়ক বিভাগ তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। গত জুলাইয়ে তারা ঘোষণা দেয়- আপাতত এ গাছগুলো রেখেই দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলকে সংযুক্তকারী যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন তারা।

কিন্তু ৬ জানুয়ারি সভায় বিশেষজ্ঞ মতামতের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, গাছগুলোকে রেখে রাস্তা প্রশস্ত করা সম্ভব নয়। ওই সভায় সড়ক বিভাগের দুজন অতিরিক্ত সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সবাই গাছ কাটার পক্ষে মত দেন। এর পর পরই এ মহাসড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য প্রাচীন ওই তিন শতাধিক রেইনট্রিসহ কাটার তোড়জোড় চলছে প্রায় আড়াই হাজার গাছ। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য খুব শিগগির দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী মাসে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পটি যেভাবে হয়েছে, তা বাস্তবাযন করতে গেলে গাছ কাটার কোনো বিকল্প নেই।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, সড়কটির দু’পাশে ঘনবসতি এবং বড় বড় স্থাপনা রয়েছে। বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর হওয়ায় এখানে এমনিতেই ভারী যানবাহনের চাপ থাকে। এরপর এ মহাসড়কের পাশে নতুন করে গড়ে উঠছে বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন। ফলে সংকীর্ণ এ রাস্তাটি প্রশস্ত করা জরুরি। এ ছাড়া প্রাচীন গাছগুলো এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে গাছগুলো কেটে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

যশোরের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলও একই কথা বলেন। তিনি জানান, সর্বসম্মতিক্রমে গাছ কাটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাছগুলো অনেক পুরনো এবং গাছের ডালপালা ভেঙে সম্প্রতি অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তবে সরকারি সিদ্ধান্ত যাই হোক, মহাসড়কটির দু’পাশে বসবাসকারীদের দাবি, পুরনো গাছগুলো টিকিয়ে রেখে রাস্তা প্রশস্ত করা হোক। আর তা করা হলে একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী গাছগুলো টিকিয়ে রাখা যাবে, তেমনি মহাসড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। রক্ষা করা যাবে পরিবেশের ভারসাম্যও। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলছেন, উন্নয়নের স্বার্থে গাছ কাটতেই যদি হয়, তাহলে নতুন সড়কের পাশেও যেন নতুন করে গড়ে তোলা হয় সবুজ বেষ্টনী।

গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, এ মহাসড়কের ভারত অংশে পুরনো গাছগুলো বিশেষ উপায়ে রেখে রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। একই উপায়ে এপাড়ে করা হলে একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী গাছগুলো টিকিয়ে রাখা যাবে, তেমনি মহাসড়কের সৌন্দর্য বাড়বে।

যশোর সওজ ও জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, মহাসড়কটির উভয় পাশের গাছের মধ্যে রয়েছে রেইনট্রি, মেহগনি, বাবলা, খয়ের, কড়ই, আকাশমণি, বট, শিশু, ঝাউ, আম, কাঁঠাল, সেগুন, শিমুল ও দেবদারু। এর মধ্যে ১০০ বছরের বেশি পুরোনো রেইনট্রি রয়েছে ৭৪৫টি।

সওজ সূত্র জানায়, ১৯১৩ সালে যশোরের কালেক্টর জনসন প্রথম ২৪ ফুট প্রস্থের যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মহাসড়কটির উন্নয়ন করা হলেও সম্প্রসারিত হয়নি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত ২১ মার্চ ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়।

সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কটি ৩৮ দশমিক ২০০ কিলোমিটার লম্বা। চওড়া ২৪ ফুট। চওড়া বাড়িয়ে ৪০ দশমিক ৩৫ ফুট করার কথা রয়েছে। যশোর শহরের দড়াটানা এলাকা থেকে সম্প্রসারণকাজ শুরু হয়ে তা শেষ হবে বেনাপোলের শূন্য রেখা পর্যন্ত। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog