জাপানে অতি বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে এ পর্যন্ত ১০৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে আরও ৭৯ জন।
সোমবার সকাল থেকেই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে কাদামাটি ও ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে নিখোঁজদের খুঁজে করার কাজ শুরু করেছে উদ্ধারকর্মীরা। এখনও নিখোঁজ রয়েছে আরো কয়েক ডজন মানুষ। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এর আগে গত শনিবার ( ৭ জুলাই) দেশটিতে বন্যা ও ভূমিধসে ৪৯ জন প্রাণ হারানোর কথা জানা গিয়েছিল। কিন্তু গত ৪৮ ঘণ্টায় এই সংখ্যা বেড়ে ১০৯য়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৩ সালের পরই জাপানে বন্যায় এটিই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা। ওই বছর দেশটিতে বন্যায় মারা গিয়েছিল ১১৭ জন।
গত সপ্তাহ থেকেই একটানা প্রবল বর্ষন শুরু হয়েছে যার প্রভাবে বন্যা আর ভূমিধসের মত ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যেও কিছু কিছু এলাকার তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে অবস্থান করছে। ফলে ওইসব এলাকায় তাপদাহ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃষ্টির কারণে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ আর পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে সেখানকার লোকজন। মিহারা সিটির বাসিন্দা ইউমেকো মাতসুই বলেন,‘আমরা গোসল করতে কিংবা টয়লেটে যেতে পারছি না। ঘরে খাবার দাবার কমে গেছে। শহর জুড়ে চলছে খাবার পানির সঙ্কট। দোকানগুলোতেও মিলছে না পানি আর চায়ের বোতল।’
সোমবার এক বিদ্যুৎ কোম্পানি জানিয়েছে, দেশটির প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ এবং পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে আরো হাজার হাজার মানুষ।
গত শনিবার আকস্মিক বন্যার কারণে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল ৫০ লাখের বেশি মানুষকে। বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া এবং নিখোঁজদের উদ্ধার অভিযানে এখনও ব্যস্ত রয়েছে দেশের হাজার হাজার পুলিশ, সেনা ও দমকলকর্মী।
বন্যার পানিতে আটকা পড়েছে দেশটির কুরাশিকি শহরের ১ হাজারের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে হাসপাতালেই আটকা পড়েছে শতাধিক মানুষ।
জাপানে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিরোশিমা অঞ্চলটি। এখানে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৫ জন। তবে নিহতদের এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এই রাজ্যে বেশ কিছু ঘরবাড়িও ধ্বংস হয়েছে। বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে বিধ্বস্ত বাড়ির নিচে চাপা পড়ে।
বন্যা ও ভূমিধসে এত বেশি সংখ্যক প্রাণনাশের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নিহতদের অনেকেই স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা মেনে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নিয়ে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিল। ফলে ভূমিধস ও বন্যায় তাদের মৃত্যু হয়।
জাপানে গত বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) থেকে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। রোববারও দেশটিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দিন কয়েক এ অবস্থা বহাল থাকবে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় বন্যা, ভূমিধস ও বজ্রপাত হতে পারে বলেও শনিবার আগাম সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছিল স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর।