বাংলাদেশ দলের জন্য তিনি কাজ করেন টনিক হিসেবে। ওয়ানডে ফরম্যাটে টাইগারদের যে বিপুল শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ, সেটিও তার অধিনায়কত্বের কাল থেকেই। টেস্ট সিরিজের ভরাডুবির পর ওয়ানডেতে এমন এক দাপুটে জয়ের প্রত্যাশাকারী ছিলেন খুব কম। কিন্তু তিনি যে মাশরাফি বিন মোর্তজা! দলের পরিবেশ বদলে দিতে পারেন এক নিমিষেই! বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।
তবে শুধু দলেরই নয়, মাশরাফি এবার পাল্টে দিয়েছেন পুরো ক্রিকেট অঙ্গনের পরিবেশই। অধিনায়ক হিসেবে তার বিচক্ষণতা আর ৩৪ বছর বয়সেও এসেও দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে স্বস্তির এক জয়। ফলে সফরকারীরা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
তবে এই ক্যারিবিয় সফরে মাশরাফিকে পাওয়া যাবে কিনা সেটি নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা। সহধর্মিনী সুমনা হক সুমির অসুস্থতার কারণে মাশরাফির উইন্ডিজ যাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়। তখন স্ত্রী সুমিই মাশরাফিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য তাড়া দিচ্ছিল। পরে এক সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকের সফরসঙ্গী হয়েই ক্যারিবিয়ানে উড়াল দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের প্রেরণা মাশরাফি বিন মোর্তজা।
তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার আগে তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেননি টাইগার দলনেতা। সর্বশেষ ঢাকা লিগের একটি ম্যাচে খেলেছেন। তারপর থেকে বোলিংয়ের প্রস্তুতি হয়নি। ইচ্ছা ছিল ১৯ তারিখের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার। কিন্তু লম্বা জার্নির কারণে প্রস্ততি ম্যাচ শুরু হওয়ার পরেই সেখানে পৌঁছালেন মাশরাফি। এরপর মাঝের দুইদিন দলের সাথে অনুশীলন। এই দুইদিনেই দলের মানসিকতার পরিবর্তন করে দিলেন।
টেস্টে ভরাডুবির পর মাশরাফির নেতৃতেই ওয়ানডেতে জয়ের ধারায় ফিরে এসেছে টাইগারবাহিনী।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের অপরাজিত সেঞ্চুরি ও সাকিব আল হাসানের ৯৭ রানে ভর করে গায়নার কঠিন পিচে ৪ উইকেটে ২৭৯ রান তোলে বাংলাদেশ। এরপর মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪৮ রানের জয় ছিনিয়ে নিয়েছে টাইগাররা।
টেস্টের ব্যর্থতার পর এক মাশরাফিতেই উজ্জীবিত হয়েছে গোটা দল। কী এমন জাদু করলেন মাশরাফি, যাতে হুমড়ি খেয়ে পড়া দলের এই আকাশে ওড়ার পারফরম্যান্স? মাশরাফির মুখনিঃসৃত কোন প্রেরণা ফের বদলে দিল দলকে? ম্যাচ শেষে ওয়ানডে অধিনায়কের উত্তর, ‘বিশেষ কিছু বলিনি। স্রেফ বলেছি, হৃদয় উজাড় করে খেলতে, দেশের জন্য খেলতে। (টেস্ট সিরিজে) যা হয়েছে, তা তো হয়ে গেছেই। এটা নতুন সিরিজ। শুরুটা ভালো করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
সেই ‘শুরুর ভালো’ কিংবা হৃদয় উজাড় করে খেলাটা রোববার হয়েছে যথার্থভাবে। মাশরাফির প্রত্যাশা, দল ধরে রাখবে এর ধারাবাহিকতা, ‘আজ ঠিক সেটাই হয়েছে। আশা করি এই পারফরম্যান্স আমরা ধরে রাখতে পারব।’
২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই গায়ানাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মহাকাব্যিক এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে এসে দলের দুঃসময়ের ফাঁড়া কাটান জয়টিও একই ভেন্যুতে। মাশরাফি জানালেন, গায়ানার উইকেটে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশ, ‘২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এখনও মনে আছে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলছি। এখানকার উইকেট আমাদের ধরনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়।’
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির বাগড়ায় পড়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। বৃষ্টি শেষে ধীর পিচ আর আউটফিল্ডে ব্যাট করতে একটু বেগ পেতেই হচ্ছিল তামিক ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে। তবুও ঠাণ্ডা মাথায় খেলে গেছেন দুজন, গড়ে দিয়েছেন বড় সংগ্রহের ভিত্তি। শেষদিকে তান্ডব চালিয়ে মুশফিকুর রহিম এনে দিয়েছেন সম্মানজনক সংগ্রহ। মাশরাফির কণ্ঠে এর সারমর্ম, স্বস্তির সুরে। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিং আজ শুরুতে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তামিম ও সাকিব দারুণ ব্যাট করেছে। সুরটা বেধে দিয়েছে। শেষে মুশির ছোট্ট ইনিংসটি ছিল অসাধারণ।’
এই জয়টা খুব দরকার ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। নানা সমালোচনার এক কঠোর জবাবও বলা যায় একে। হয়তো পরবর্তী ম্যাচগুলোতে এই জয় নতুন করে রসদ জোগাবে বাংলাদেশকে।