1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ: বিতর্ক যার নিত্য সঙ্গী

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২২১ বার

২০১৮ সাল জুড়ে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থাকে শিথিল করার দাবিতে চলমান আন্দোলনের জোয়ারের বিপরীত স্রোত হিসেবে জন্ম নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। চাকরি ক্ষেত্রে ৩০% কোটা বহাল রাখার ব্যনার নিয়ে তারা মানববন্ধন থেকে শুরু করে শাহবাগ অবরোধ পর্যন্ত করেছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে ওঠে তখন ৩০% কোটা বহাল রাখার দাবিতে পাল্টা আন্দোলনে নামে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে গড়ে প্লাটফরম ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নই আমাদের অঙ্গীকার’ শ্লোগান নিয়ে যাত্রা করা এই সংগঠনটি পদে পদে বিতর্কে জড়িয়েছে। কখনো অভ্যন্তরীণ, কখনো মাঠে আন্দোলন ও প্রতিবাদ করতে যেয়ে সংগঠনটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যাত্রা শুরুর পর এক মাস না পেরোতেই প্রথম বিপত্তি বাধে সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিনকে আহবায়ক ও তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে সদস্য সচিব করে মে মাসে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র কমিটি গঠন করা হয়।

নতুন কমিটি ঘোষণার কিছু দিনের মাথায় মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত মেহেদী হাসান নিজেকে সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন। নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না দাবি করে মঞ্চের অপরপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল ও আর্থিক অনিয়ম’র অভিযোগ তোলেন। তবে শেষপর্যন্ত অধ্যাপক জামালের নেতৃত্বাধীন ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র দাপটের কাছে মেহেদী হাসান টিকতে পারেননি। অধ্যাপক জামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কমিটি গঠন করে দিয়ে তার দলকে শক্তিশালী করে তোলেন। ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি ও আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে তিনি বছরখানেক মঞ্চকে গতিশীল রাখেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালনের পর থেকেই সংগঠনে ভাঙন দেখা দেয়।

৪ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের কোথাও দাঁড়াতে দেবেন না

এ দিন বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারাস অডিটরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল কোটা বিরোধীদের বাংলাদেশের কোথাও দাঁড়াতে দেবেন না বলে মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি কোটা বিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বলেও আখ্যায়িত করেন।

১১ আগস্ট: ভর্তি জালিয়াতকে পদায়ন

এ দিন মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি করেন। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন পরে কমিটি স্থগিত করে দেন।

১০ অক্টোবর: ভেঙে পড়ে মঞ্চ

এদিন বিকেলে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানায়, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করার কারণে মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনকে অনেক আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একাই দিন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুন পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদেরকে মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে নতুন কমিটির ঘোষণা দেন। তবে তারা অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনের নাম উপদেষ্টা হিসেবে রাখেন।

২০ অক্টোবর: ছাত্রদলকে বেধম মার

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ফেসবুক বায়োতে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’ লেখা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তবে শ্যামলের দাবি করেছিলেন ওই অ্যাকাউন্টটি ভূয়া। তার কোনো ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি নেই। ওই লেখাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নতুন সভাপতি দাবি করা আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করেন। এতে ছাত্রদলের অন্তত ১০ জন আহত হয়।

এ দিন (২০ অক্টোবর) রাতেই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বুলবুল-মামুনকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি গঠন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা (আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুন) নিজেদের মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ছিল না।’

পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুন বলেন, ‘সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ এবং গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হল। তার ‘অসুস্থ কর্মকাণ্ডে’ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বিব্রত। আমরা তার সুস্থতা কামনা করছি।’

৪ ডিসেম্বর: ভিপি নুরুর অফিসে তালা

জনৈক এক ব্যক্তির সঙ্গে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ব্যবসায়িক আলাপের একটি ফোনালাপ ফাঁস হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ফোনালাপকে কেন্দ্র করে ডাকসু ভবনে গিয়ে ভিপির কার্যালয়ে তালা দেয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনপন্থীরা। এ সময় তারা নুরের কুশপুতুলও দাহ করে।

১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর: সমাবেশে হমলা, দেশী অস্ত্রের মহড়া

গত ১৭ ডিসেম্বর ডাকসুর ভিপি নুরুল হকের আহ্বানে শিক্ষার্থীরা ভারতে বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে আন্দোলনরত দেশটির ছাত্র-জনতার প্রতি সংহতি জানাতে গেলে সেখানে হামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। হামলায় ‍ভিপি নুরসহ ১০ জন আহত হন। ঘটনার বিচার চাইতে ওইদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনে গেলে সেখানেও তাদের মেরে রক্তাক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। পরের দিন (১৮ ডিসেম্বর) এসব হামলার প্রতিবাদ করতে গেলে সেখানেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ পাল্টা সমাবেশ করে এবং রড-লাঠি নিয়ে মহড়া দেয়।

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog