1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ন

‘কী শেখার কথা কী শিখছি?’

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৪১ বার

রেজানুর রহমান

‘কী দেখার কথা কী দেখছি? কী শেখার কথা কী শিখছি? ২৫ বছর পরেও এসে স্বাধীনতাকেই খুঁজছি।’ বহুল আলোচিত গানের ভাষাটি অনেকটা এরকম। শুধু ২৫ বছরের জায়গায় ৪৮ বছর শব্দ দুটো জুড়ে দিলেই মনে হবে আজই বুঝি গানটি লেখা হয়েছে। আজও গানের কথাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। গানটির ভাষার মতোই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আসলেই ‘কী দেখার কথা কী দেখছি? কী শেখার কথা কী শিখছি? স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কেন ছাত্র রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন এলো না? কেন এখনও চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই? ছাত্র রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে আমাদের অর্জনটা কী?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সন্ত্রাসী ঘটনা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও অপরাধীদের পক্ষ থেকে বীরদর্পে সাফাই গাওয়ার সাহস সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ? যেখানে ডাকসুর মতো ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংসদের ভিপি সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হলেন। এই ঘটনার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনসহ ৩৭ জনের নামে মামলার আবেদন করেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। এছাড়াও এই হামলার ঘটনায় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র একাংশের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য ও মেহেদী হাছান শান্তর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, অনেকেই অভিযোগ করছেন ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নাকি গায়েব করা হয়েছে।

মূল অভিযোগ হলো, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভিপি নুর-সহ তার সহযোগীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ছাত্রলীগেরই নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠন। গত বছরের অক্টোবরে শাহবাগ এলাকায় টানা প্রায় এক মাস অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নেতা এই সংগঠন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ভিপি নুরের ওপর হামলা করেছে এ কথা কেউই অস্বীকার করছে না। তবে ঘটনার দায় কেউই নিতে চাচ্ছেন না। ওইদিন ডাকসু ভবনে ভিপি নুরের ওপর দুই দফা হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই দফাই ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে, প্রচার মাধ্যমগুলো ছাত্রলীগকে নিয়ে প্রায়শই অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ ও প্রচার করে যাচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়।

ছাত্রলীগের এই অভিযোগ কতটা প্রাসঙ্গিক তা তলিয়ে দেখা দরকার। কারণ, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই ছাত্র সংগঠনটির অনেক অবদান রয়েছে। কাজেই কেউ যদি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মনে হয় তারও তদন্ত হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে এটাও জরুরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিকালে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর ভিপি পদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অনেক সম্মানের। ভিপি নুরুল হক নুরকে ঘিরে নানান বিতর্ক রয়েছে। কিছু বিতর্ক রাজনৈতিক, কিছু বিতর্ক আর্থিক। রাজনৈতিক বিতর্ক রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর আর্থিক বিতর্কের ক্ষেত্রে তো দেশের আইন আদালত রয়েছেই। কাজেই সে পথে না গিয়ে সন্ত্রাসের পথে হাঁটা কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত তা নিয়েই জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে এখন রাজনীতির মাঠের চেয়ে চায়ের দোকান, রাস্তার মোড়ের আড্ডায় রাজনৈতিক চর্চা হয় বেশি। তেমনই এক আড্ডা চিত্র তুলে ধরছি। উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর রেল স্টেশন। গভীর রাতে ঢাকামুখী নীলসাগর ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকশ যাত্রী। প্রচণ্ড শীত। ট্রেন লেট। তাই প্রচণ্ড শীতেও প্ল্যাটফরমের এখানে সেখানে ইতস্তত আড্ডা চলছে। হঠাৎ কানে এলো একজন প্রবীণের কণ্ঠস্বর। দারুণ ক্ষুব্ধ তিনি।

এই দেশে ছাত্র সংগঠনের আর কোনও দরকার নাই। লেখাপড়ার নামে ঠন ঠনা ঠন! কিন্তু পদ-পদবির জন্য জান কোরবান… এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটা ঘটলো… ডাকসুর ভিপি তো আর ভাই যে সে পদ নয়! তাকে কুকুর শিয়ালের মতো আপনি পিটাইবেন?

প্রবীণের কথা টেনে নিলো একজন তরুণ– আপনি কি চাচা নুরুল হক নুরের কথা বলতেছেন? সে তো একজন পাক্কা অভিনেতা! ইচ্ছা কইর‌্যা মাইর খায়। মাইর খাইলে প্রচারমাধ্যমে নিউজ হবে। তাকে নিয়ে আলোচনা হবে। রাজনীতিতে তার বাজার দর বাড়বে…। এবার তরুণের কথা কেড়ে নিলো মধ্যবয়স্ক একজন লোক– নুরকে তো নেতা বানাইয়া দিছে ছাত্রলীগ। তারা ভাবছে নুরকে পিটাইলে নুরের রাজনৈতিক ক্ষতি হবে। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়, ছাত্রলীগ নুরকে যতবার পিটাইছে নুরের ততবারই রাজনৈতিক ফায়দা হয়েছে। আপনি খোঁজ নিয়া দেখেন আগে কয়জন মানুষ নুরকে চিনতো? আর এখন কতজন মানুষ নুরকে চেনেন? নুরের উচিত ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ দেওয়া। প্রবীণ ভদ্রলোক এবার বয়স্ক লোকটির কথা টেনে নিয়ে বললেন, আপনারা কিন্তু অন্য মার্গে কথা বলতেছেন! আমার কথা শোনেন, এই দেশে আর ছাত্র রাজনীতির দরকার নাই। কয়জন ছাত্রনেতা সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের সুযোগ-সুবিধা নিয়া ভাবে? কোনও দিন কি শুনেছেন লাইব্রেরিতে মানসম্পন্ন বইয়ের জন্য ছাত্র আন্দোলন হয়েছে? কোন কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চহারে টিউশন ফি আদায় করা হয়। এর বিরুদ্ধে কি কথা বলে কোনও ছাত্র সংগঠন? অনেক স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠে নাই। এ ব্যাপারে ছাত্র সংগঠনগুলো কি কোনও ভূমিকা রাখে? রাখে না। তাহলে ছাত্র সংগঠনের দরকার কী? ডাকসুর কথাই ধরেন। বহু বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে বর্তমান ডাকসু কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে?

ট্রেন এসে পড়েছে। স্টেশনে থামবে মাত্র কয়েক মিনিট। থিয়েটার সৈয়দপুর নামে একটি নাট্য সংগঠনের নাট্য উৎসবে ঢাকা থেকে ‘এথিক’ এসেছিল নাটক করতে। সংগঠনের নাট্যকর্মীরা ট্রেনযোগে ফিরে যাবে ঢাকায়। তাদের বিদায় দিয়ে শহরে নিজের বাড়িতে ফিরে যাবো ভাবছি। হঠাৎ দেখি সেই বুড়ো ভদ্রলোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন! তিনি তার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিতে এসেছিলেন।

প্রসঙ্গ তুলে বললেন, ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। হলে সিট পায়নি। মেসে কষ্ট করে থাকে। সরকারি ছাত্র সংগঠনের মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয় থাকলে নাকি তার হলে সিট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমি না করে দিয়েছি। আমি চাই না ও ছাত্র সংগঠনে জড়িত হয়ে জীবনটা নষ্ট করুক।

কথাটা বলে ভদ্রলোক শীতের কুয়াশার মাঝে মিলিয়ে গেলেন!

একবার ভাবলাম, তাকে ডেকে প্রতিবাদ করি। ছাত্র সংগঠন করা কি অপরাধ? এই যে আমরা কথায় কথায় ছাত্র রাজনীতিকে দোষারোপ করি, দোষটা কি ছাত্র রাজনীতির? নাকি যারা আমরা ছাত্র রাজনীতি করি অথবা ছাত্র রাজনীতিকে নেতৃত্ব দেই তাদের?

ডাকসুর কথাই যদি বলি, দীর্ঘ ২৮ বছরের বন্ধ্যাত্ব ভেঙে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর অনেক আশার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চরম হতাশা ছড়াচ্ছে ডাকসু। শুরু থেকেই ভিপি আর জিএসের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বারবার হামলার শিকার হন ভিপি নুর। অনেকে মনে করেন আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির লড়াইয়ে মূলত ডাকসু তার কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য কখনোই মঙ্গল বয়ে আনবে না। দেশের প্রয়োজনেই ছাত্র রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করুন।

ইংরেজি নতুন বছরের প্রাক্কালে সবার জন্য রইলো শুভ কামনা। ভালো থাকবেন সকলে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog