এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হয়েছে টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলালকে। সোমবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে কারাগারে থাকা তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্ত কমিটি। কক্সবাজারের জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা এই তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত টিমে রয়েছেন কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান, সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাকির হোসেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ।
তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কমিটি র্যাবের ৭ দিনের রিমান্ডে থাকা বাকি সাত আসামিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে। রিমান্ডে থাকা ৭ আসামি হলেন, উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার ৩ সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও মোহাম্মদ আয়াস। আদালতের নির্দেশে গত শুক্রবার তাদেরকে রিমান্ডে নেয় র্যাব।
এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের খুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ২৩ আগস্টের মাঝে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রোববার গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঘটনা যেখানে থেকে সূত্রপাত সে মারিশবনিয়া পাহাড় থেকে হত্যার ঘটনাস্থল তিনবার পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারাই ছিল, টেকনাফ থানার পুলিশ, তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, আর্ম ব্যাটালিয়ন পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত যানবাহন ও সেইসব গাড়ির চালক, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, সুরতাল তৈরিকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোটামুটি প্রায় ৬০ জনের মত ব্যক্তিকে জিঙ্গাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়ে তাদের কাছে থাকা ডকুমেন্ট পত্র যোগাড় করেছি এবং তা পর্যালোচনা করেছি।
আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। আশা করছি সে সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের মতে, সিনহা হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এর মাঝে এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় এসব প্রশ্নের জবাব মিলছে কিনা তা খতিয়ে দেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান।
এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে র্যাবকে। ইতিমধ্যে মামলার নতুন আইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসামিদের রিমান্ডেও নিয়েছেন।