বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক শওকত আলী মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহে…….ইলাইহে রাজিউন)।
তার বড় ছেলে আরিফ শওকত পল্লব জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি জটিলতা ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে গত ৪ জানুয়ারি ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শওকত আলী। প্রথমে আইসিইউতে রাখা হলেও পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল।
বাঙালি সমাজব্যবস্থার ক্রম পরিবর্তন নিয়ে যেকজন লেখক কাজ করেছেন শওকত আলী তাদের অন্যতম। বিভিন্ন দশকে বাঙালি মধ্যবিত্তের চিন্তাধারার পরিবর্তনও উঠে এসেছে তার লেখনীতে। একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষক শওকত আলী রেখে গেছেন প্রদোষে প্রাকৃতজন, দক্ষিণায়নের দিন আর পূর্বরাত্রি পূর্বদিনের মতো কালজয়ী উপন্যাস।
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শওকত আলীর জন্ম ১৯৩৬ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে। ছোটবেলা থেকে রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠা শওকত আলীও জড়িত ছিলেন বামপন্থী রাজনীতিতে। দেশভাগের পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের দিনাজপুরে চলে আসেন শওকত আলী। সেখানেই তার হাতেখড়ি হয় লেখালেখিতে।
শওকত আলীর কর্মজীবন শুরু ১৯৫৫ সালে দৈনিক মিল্লাতে সাংবাদিক হিসেবে। ১৯৫৮ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন দিনজাপুরের একটি স্কুলে। ১৯৬২ সালে জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন শওকত আলী। এর আগে বিভিন্ন পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে লেখালেখি চালালেও ঢাকায় আসার পর লেখালেখির প্রসার ঘটে তার। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘পিঙ্গল আকাশ’।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে খ্যাতির চুড়ায় ওঠেন শওকত আলী। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত উপন্যাস প্রদোষে প্রাকৃতজন। উপন্যাসত্রয়ী দক্ষিণায়নের দিন, কুলায় কালস্রোত এবং পূর্বরাত্রি পূর্বদিনের জন্য শওকত আলী পেয়েছেন ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার। তার এসব উপন্যাসে মূলত ষাটের দশকে বাঙালি মধ্যবিত্ত এবং সমাজব্যবস্থায় ধ্যান-ধারণা, চিন্তা এবং জীবনযাপনে পরিবর্তনের ধারা উঠে এসেছে।
সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান শওকত আলী। ১৯৯০ সালে ভূষিত হন একুশে পদকে। বিংশ শতাব্দিতে বাংলা ভাষাভাষি লেখকদের মধ্যে শওকত আলী ছিলেন অন্যতম। তার চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্যে এক নক্ষত্রের পতন বলেই মনে করছেন সাহিত্য সংশ্লিষ্টরা।