প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাইকে সমান সুযোগ দিতেই আমরা প্রাথমিক ও সমাপনী পরীক্ষার ব্যাবস্থা চালু করেছি। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার হলে সবাই নার্ভাস হয়ে যায়। এটা কাটানোর জন্যও এই পরীক্ষা জরুরী। বৃহস্পতিবার গণভবনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ফলাফল হাতে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরীক্ষার সুফল পাচ্ছে দেশ। কিন্তু অনেক অভিভাবক এগুলো দেখতে পাচ্ছেন না। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ক্রমাগত ভালো করছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা আরও বেশি ভালো করছে। ছেলেরা কেন পিছিয়ে পড়ছে-এটাই এখন দুশ্চিন্তার বিষয়।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার বিরোধিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন। স্কুলে সব ছেলে-মেয়েকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া, পরীক্ষার ভীতি দূর এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি-এই তিন কারণে প্রাথমিক এবং মাধ্যমি সমাপনী পরীক্ষা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি মাঝখানে বেশ তর্ক বিতর্ক হয়ে গেলো পরীক্ষাটা হবে কি হবে না। একটা পর্যায়ে প্রাথমিক সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নিয়ে বেশ তর্ক হলো, অনেকেই চাইলেন পরীক্ষা হবে না।‘
সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কারণে পরীক্ষাটা দেওয়া সেটা আমার আবার বলা দরকার। অনেক অভিভাবকও অনেক সময় অনীহা প্রকাশ করেছে। এই কারণটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। অতীতে নিয়ম ছিল, স্কুল থেকে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বেছে নিয়ে তাদেরকে সারাক্ষণ পড়ানো হতো। যেন তারা পড়াশোনা করে বৃত্তিটা পায়। একইভাবে ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষার সময় একই নীতি অনুসরণ করা হতো। শিক্ষকরা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ঠিক করে দিতেন এবং তাদেরকে আলাদাভাবে কোচিং দেয়া হতো, পড়ানো হতো। এভাবে কিছু ছেলেপেলেকে শিক্ষকরা বেঝে নিচ্ছেন, তাদের ওপর নজর দিচ্ছেন। আর বাকি ছেলে মেয়েদের দিকে স্বাভাবিকভাবে তাদেরও পর অতটা নজর দেয়ার সময় শিক্ষকদের থাকে না বা ছেলে মেয়েরাও অতটা মনযোগ দেয় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ক্লাসে যদি ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী থাকে এবং আমরা যদি সেখান থেকে ১০ জনকে বেছে নেই এবং এদেরকে পড়াশোনা করালাম, তাহলে বাকি ৩০ বা ৪০ জনই থেকে গেলো। এই ৩০ বা ৪০ জনের মধ্যেও তো অনেক মেধাবী থাকতে পারে, তারা তো বঞ্চিত হলো। এই বঞ্চনা কেন হবে। সবাই পরীক্ষা দিক-রেজাল্ট দেখে বৃত্তির জন্য বেছে নেয়া হবে। এই চিন্তা থেকেই আমরা পরীক্ষাটা শুরু করলাম।’
পরীক্ষাভীতি দূর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা কথা হলো, এসএসসি পরীক্ষা দিতে গেলে একটা ভয় মনের মধ্যে ঘুরঘুর করে, পরীক্ষার হলে সবাই নার্ভাস হয়ে যায়। আবার ছাত্রছাত্রীরা যতটা নার্ভাস হয়, বাবা মায়েরা তার চেয়ে বেশি নার্ভাস হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বোর্ডে পরীক্ষা দেয়ার একটা অভ্যাস সেটা গড়ে উঠছে তাতে পরীক্ষা দেয়ার ভীতিটা চলে যাচ্ছে। কারণ, তারা ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের পরীক্ষা দিয়ে আসছে।’
শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষার পর এখন সার্টিফিকেট দেয়া হয় তাদের। এই সার্টিফিকেট হাতে পেলে ছোট্ট একটা বাচ্চা ভাবে আমি কিছু একটা করলাম। বা আমাকে একটা স্বীকৃতি দেয়া হলো। আমি মনে করি, যদি সব বাচ্চা তাদের সার্টিফিকেটটা নিয়ে একটা ছবি তুলে ঘরে টাঙিয়ে রাখে, তাহলে সে বড় হয়ে দেখবে সে একটা সার্টিফিকেট পেয়েছিল।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একেকটা স্তরে যখন পরীক্ষা হবে, তখন যে সে সার্টিফিকেটটা পাচ্ছে, তখন তার ভেতর একটি আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। অর্থাৎ ছোটবেলাই ভিত্তিটা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না, আমাগের গার্ডিয়ানরা এর (এসব পরীক্ষার) ফলাফলটা দেখতে পাচ্ছেন কি না। তবে এর ফলে মানুষের ভেতরে একটা সচেতনতা, ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ, তাদের আত্মবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে-এটা খুবই প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।‘
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেওয়া হয়।
এরপর দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।