প্রতিবেদক: পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মাকে হত্যার দায়ের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানকে আগামী ১০ এপ্রিল সকাল ১০টায় আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তার মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে আইজিকে (প্রিজন) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঐশী রহমানের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলাকালে যুক্তি উপস্থাপনের পর সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত ১২ মার্চ থেকে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির।
মামলার শুনানিকালে ঐশীর আইনজীবী সুধীর চ্যাটার্জি বলেন, যেসময় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে সেসময় ঐশী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এসময় আদালতে একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐশীর বাবার পরিবারে জীনগত মানসিকভাবে ভারসাম্যহীনতার সমস্যা রয়েছে।
আদালতে হাজিরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক বলেন, এ মুহূর্তে ঐশীকে হাজির করলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করেই বিচারিক আদালত রায় দিয়েছে। এরপর আদালত দুই আইনজীবীকে ঐশী হাজির করার আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন। আপিলে তিনি বলেছেন, তার বিচার প্রক্রিয়া ছিল ভুলে ভরা। মিথ্যা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বয়সের ক্ষেত্রে মামলার বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেননি আদালত।
২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে দুইবার মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ে প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।
একইসঙ্গে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলার অপর আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেন আদালত।
ওই দিন বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ঐশীর প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর সে যে সাবালিকা, এটাও প্রমাণ হয়েছে। আসামিপক্ষ ঐশীর বয়সের পক্ষে যা যুক্তি দিয়েছে, তা যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঘটনার দিন ঐশী নেশাগ্রস্ত ছিল। তার ক্রিমিনাল ইনটেন্ট (অপরাধ সংঘটনের ইচ্ছা) ছিল। হঠাৎ করেই কোনো উত্তেজনা ছিল না, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সে তার বাবা-মাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। সে সুকৌশলে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে।