পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকার সাড়ে আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অকাল বন্যা কেড়ে নিয়েছে দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল। আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকে হাওর এলাকার মানুষের সর্বনাশের এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর হাওর এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার আগে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা এক কথায় ভয়াবহ। গত মাসের শেষদিকে পাহাড়ি ঢলে দেশের হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। বোরো ধান কাটার মৌসুমে হঠাৎ বন্যায় লাখ লাখ কৃষকের মাথায় হাত পড়ে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় ধানের পাতা পচে পানি বিষাক্ত হওয়ার ঘটনা। যার প্রতিক্রিয়ায় মাছ মরা শুরু হয়; তারপর মরতে থাকে হাঁস। অভিযোগ ওঠে, ভারত থেকে আসা পানিতে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়া থাকায় পানি বিষাক্ত হয়ে মাছের মৃত্যু ঘটছে। তবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল ওই এলাকা ঘুরে পানি পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ পায়নি। আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের দুই হাজার ৮৬০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার ৩৪৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় জেলায় মোট ২১৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; সুনামগঞ্জে তিন হাজার ৯০২টি হাঁস ও চারটি মহিষ মারা গেছে। বৈঠকে হাওর এলাকার বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। পানি সম্পদমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি হলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতে হবে। গত বছরও বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিল পরিশোধ করা হয়নি। এবার এ নিয়ে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হবে না। হাওরের ফসল রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া এবং ক্যাপিটাল ড্রেজিয়ের মাধ্যমে পাহাড়ি নদীগুলোর নাব্য বাড়াবার কথাও বলেছেন তিনি। সরকার হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর হাওর পরিদর্শনকালে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। হাওরের ফসল রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমনটিও কাম্য।