মায়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চলমান পাশবিকতা বন্ধে জরুরি প্রদক্ষেপ নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।
রবিবার কাজাখাস্তানের রাজধানী আস্তানায় সংগঠনটির নেতারা রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মায়ানমার সরকারকে আহ্বান জানান।
কাজাখাস্তানের আস্তানায় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে উঠে আসে রোহিঙ্গাদের নিধনের বিষয়টি। এজন্যে সম্মেলনের ফাঁকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতনের বিষয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।
বৈঠকের পরে এক বিবৃতিতে ওআইসি জানায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে সদস্যরা সম্মত হয়েছেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর উপর চলা সহিংসতা বন্ধেও পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করে ওআইসি।
রবিবারের সংবাদসম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘শান্তি বজায় রাখতে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য বজায় রাখা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, সহিংসতা দূর করে বিশ্বের শান্তি বজায় রাখতে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য জরুরি। উন্নতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের তদন্তকাজ চালানোর অনুমতি দিতে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় ওআইসি’র ৫৭টি দেশভূক্ত জোটের নেতারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিষ্ঠুরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মায়ানমার বাহিনীর অবরোধের মুখে গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশনে হামলা ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
এরপর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গ যোগ দেয় দেশটির বৌদ্ধ চরমপন্থীরাও। অভিযানে হেলিকপ্টার গানশিপেরও ব্যাপক ব্যবহার করে মায়ানমার সেনাবাহিনী। সীমান্তে পুঁতে রাখায় হয় স্থলমাইন।
মায়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, কুপিয়ে হত্যা, নারীদের গণর্ষণের অভিযোগ উঠে। তারা রোহিঙ্গাদের হাজার হাজার ঘরবাড়ি এবং একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি বয়োবৃদ্ধ নারী এবং শিশুরাও। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই সহিংসতায় প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে।
জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ভিভিয়ান জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
সূত্র: প্রেস টিভি