1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

নির্বাচন ঘিরে সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ, রাজনীতিতে ফের সংঘাতের ইঙ্গিত!

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
  • ২৫৯ বার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। নির্বাচন ইস্যুতে সরকার ও প্রধান বিরোধী শক্তির মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ নেই। এই দুই শক্তির বিরোধের মধ্যেই যুক্তফ্রন্ট নামে আরেকটি শক্তি নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে। তারা একটি জাতীয় ঐক্য গঠনেরও চেষ্টা করছে। নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠের রাজনীতি আসছে। ফলে সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের সংঘাতময় হতে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জনসমাবেশে বিএনপি নেতারা আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগসহ কিছু কড়া বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। জনসমাবেশে বিএনপি নীতিনির্ধারকরা প্রধানত তিনটি দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন – খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে, নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

সেই সঙ্গে বিএনপি নেতারা সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন, দ্রুত তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দেওয়া না হলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকারর মোশাররফ হোসেন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আন্দোলনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।’

নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার আগে সরকারতে পদত্যাগ করতে বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসাথে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের ভাষণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং কমিশন ঢেলে সাজানোর দাবি করেন।

বিএনপি নেতাদের এসব দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগের দাবি নাকচ করে বিষয়টি কাদের বলেন, ‘এই বিষয়টি সংবিধান সম্মত নয়। ১০ বছরে একটা দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো আন্দোলন বিএনপি নামক বিরোধী দল করতে পারেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো ব্যর্থ অপজিশন, এতো ব্যর্থ বিরোধী দল আর এসেছে বলে কারো জানা নেই। তারপরও কিভাবে দাবি করে? এই ব্যর্থতার জন্য টপ টু বটম বিএনপির সকল নেতার পদত্যাগ করা উচিত।’

শনিবার বিকেলে দলীয় সভানেত্রীর ধানমণ্ডি কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন কাদের।

বিএনপির রাজনীতির কড়া সমালোচনা করে দলটির প্রতি এ সময় তিনটি প্রশ্ন রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল তৎকালীন জিয়া সরকার, আর ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বিনা খরচে সাবমেরিন বসানোর প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিলো দলটি, সবশেষ খালেদা জিয়ার রায়ের আগে কেন তড়িঘড়ি করে দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাতিল করেছে বিএনপি? তাও জানতে চান ওবায়দুল কাদের।

কাদের বলেন, ‘এই তিনটি বিষয় বিএনপিকে ভোট পেতে হলে জাতির কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে, ক্লিয়ার করতে হবে। তার আগে এই দলের সঙ্গে রিলেশন সম্ভব না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ১০ বছরে একদিনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বিএনপি। বাংলাদেশে এমন ব্যর্থ বিরোধী দল কখনো ছিল না।

বর্তমান সরকারের জনভিত্তি অনেক শক্তিশালী বলে মন্তব্য করে কাদের বলেন, সরকারের হাতে খালেদ জিয়াকে মুক্ত করার এখতিয়ার নেই। আইন অনুযায়ী বিএনপি যদি বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে তাতেও সরকারের কোনো বাধা নেই।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উন্নয়নে বিএনপির কোনো ভূমিকা নেই কিছুই নেই। নিজেরা ক্ষমতায় থাকার সময় বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবল পাওয়ার পরও তা প্রত্যাখ্যান করে দেশকে পিছিয়ে নিয়েছিল তারা।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লিগ্যাল ব্যাটলে তারা যদি বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারেন, ওয়েলকাম। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, সরকারের পক্ষে থেকে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে লিগ্যাল ব্যাটলে কোনো প্রকার বাধা, কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ আমাদের পক্ষ থেকে হবে না।’

একই দিন বিকেলে সরকার কড়া বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন যুক্তফ্রন্টের নেতারা। ‘এটা খুব সিগনিফিকেন্ট, ইতিহাস বলে অনেক সহ্য করেছি, ১০ বছর হয়েছে। এবার চলে যাও। এবার মসনদ ছাড়ো। নইলে জনগণ টেনে নামাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এবং যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রমুখ।

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশে নাকি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হচ্ছে। বিদেশিদের সঙ্গে নাকি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অন্যরকমের সরকার, সংবিধানের বাইরের সরকারের জন্য। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশীদার নই। অসাংবিধানিক কোনো সরকারকে আমরা স্বীকৃতি দেব না। অগণতান্ত্রিক সরকারকে আমরা মেনে নেব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এক স্বেচ্ছাচারীর পরিবর্তে অন্য এক স্বেচ্ছাচারীকে আমরা আনতে দেব না। যারাই গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। শুধু যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল তাদের সঙ্গে আমরা যাব না, এটা পরিষ্কার কথা। আমরা চাই এই সরকার নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করবে। আমরা নির্বাচন বর্জনের কথা বলি না, সরকারকে বাধ্য করবো নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করতে।’

বি. চৌধুরী বলেন, ‘কত বড় স্বৈরাচার ছিলেন পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান, ১০ বছরের বেশি টিকে নাই কিন্তু। আমাদের দ্বিতীয় স্বৈরাচার হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, তিনি আশ্চর্যজনকভাবে ১০ বছর টিকেছিল। বর্তমান স্বেচ্ছাচারী সরকারও কিন্তু ১০ বছর টিকে গেছে। এটা খুব সিগনিফিকেন্ট।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৮ থেকে ৩৫ বছরের যে জনসংখ্যা বাংলাদেশ ৫ কোটি ১৬ লাখ, আর ১৮ থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত যারা আছেন তারা ভোটাধিকার বঞ্চিত। এবার তারা প্রথম ভোট দেবেন। ছাত্ররা যারা আছে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছিল তাদের রামদা, লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে, তাদেরই আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর যারা হাতুড়ি, রামদা, লাঠি নিয়ে আক্রমণ করলো তাদের কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদেরও মা, বাবা আছে, ভোটার আছে। এদের সংখ্যা কতো?’

ইভিএম পদ্ধতিকে ‘দুই রকমের ষড়যন্ত্র’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো নির্বাচন, নির্বাচনের ভিত্তি হলো অবাধ নিরপেক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগ। আমরা এখনো জানি না শেষ পর্যন্ত গিয়ে কত লাখ, কত কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করা হবে। আমরা ওইদিকে লক্ষ্য রাখছি না, আমরা মেতে আছি ইভিএম নিয়ে। ইভিএমটা দুই রকমের ষড়যন্ত্র। একটা হলো ভোট চুরির ষড়যন্ত্র, আরেকটা হলো রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে ইভিএম এর বিরুদ্ধে লড়াই।’

সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংসদ ভেঙে না দিলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনের এক মাস আগেই ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে।’

দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শহিদুল আলমের গ্রেফতার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে যখন এক রকম কথা বলেন, আবার তার (প্রধানমন্ত্রী) ভাগ্নি মুক্তি চান- এসব দেখে আমরা বিব্রত হই। আমরা অবিলম্বে শহিদুল আলমের মুক্তি চাই।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের পরিণতি আমরা দেখেছি। যারা দুই নম্বরি, তিন নম্বরি করেছে; ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে তাদের অবস্থান হয়েছে। ইতিহাস প্রমাণ করে, বাংলাদেশের জনগণ কখনও পরাজিত হয়নি। বড় বড় স্বৈরাচার আমরা দেখেছি, কেউ তাদের চিরস্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’

ড. কামাল আরো বলেন, ‘মানুষ যদি সঠিকভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়, যদি তারা নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারে; তাহলে আমি মনে করি বাংলার মানুষ ভুল করবে না। তরুণ সমাজকে ভোট পাহারা দেয়ার জন্য বোঝাতে হবে, যাতে জাল ভোট কেউ দিতে না পারে।’

আ স ম রব বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট-গণফ্রন্ট মিলে যে ঐক্য হয়েছে আমরা এটাকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে নিয়ে যাব। স্বৈরাচার সরকার ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া বাংলাদেশের সবাইকে আহ্বান জানাবো আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য।’

মাহমুদুর রহমান মান্নার বাসায় সিভিল ড্রেসে ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) লোক যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যারা আছেন, আগামীতে যদি তাদের কারও বাসায় হামলা করা হয়, পরিণতি ভালো হবে না, ভয়াবহ হবে। আমরা জবাব দেব।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,‘আমরা অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ব্যবহার করা লোক। আমরা মাঠে নামবো, ঘরে বসে থাকব না। মিছিল হবে, মিটিং হবে, অনুমোদন না দিলে বসে পড়বো। কোনো অনুমোদন নেব না। সংবিধানের কোথাও লেখা নাই মিছিল-মিটিংয়ের জন্য অনুমোদন নিতে হবে।’

মান্না আরো বলেন, ‘ইভিএম মেশিন, যন্ত্রপাতির জন্য আগেই এলসি খুলে বসে আছেন। একনেকের অনুমোদন নাই, কোনো মন্ত্রিসভার বৈঠক নাই; কী করে এলসি খুললেন? কীভাবে অনুমোদন দিলেন? এটা ফোরটুয়েন্টির ব্যাপার। এরা সব লুটেরা, লাখ-লাখ, কোটি-কোটি টাকা লুট করেছে। এটা একটা লুটের প্রকল্প। একই সঙ্গে টাকাও লুট করবে, ভোটও লুট করবে।

ফলে সহজেই অনুমেয় নির্বাচনকে ঘিরে সামনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠতে পারে। কেননা, সরকার চাচ্ছে আরেকটি যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। অন্যদিকে বিরোধী শক্তিগুলো চাচ্ছে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে একটা পরিবর্তন আনতে। ফলে দুই কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog