1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

জঙ্গি ইস্যুতেই চাপা পড়ছে বানভাসীদের কান্না

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬
  • ২৪৬ বার

গুলশান-শোলাকিয়া ট্র্যাজেডির ক্ষত না শুকাতেই কল্যাণপুরের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের খবরে তোলপাড় দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম। জঙ্গি ইস্যুতে রাজনীতিতে চলছে ঘূর্ণিপাক। শহরের সীমানা পেরিয়ে জঙ্গিবাদের আলোচনা এখন অজোপাড়া গাঁয়েও। জঙ্গিরা মারছে, মরছে। সভ্যতার এই নয়া রোগের উপসর্গ নিয়ে অস্থির সমাজ, অস্থির রাজনীতি।

এদিকে জঙ্গি ইস্যুর এমন অস্থির রাজনীতির ডামাডোলে চাপা পড়ছে লাখ লাখ বানভাসী মানুষের বেঁচে থাকার আহাজারি। পানির তলে হাজার হাজার বাড়ির সঙ্গে ডুবছে সর্বহারা কৃষকের স্বপ্ন। সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত উত্তরবঙ্গের লাখো মানুষ। থাকার জায়গা নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই, পানি নেই। এমনকি সমাজ, রাষ্ট্র ভাবুকদের সহানুভূতিও মিলছে না তাদের কপালে।

জঙ্গিবাদের ‘হট কেকে’ আটকা পড়েছে দেশের রাজনীতি। রাজনীতির কেন্দ্রই জঙ্গিবাদ। ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি যেন এখন জঙ্গিই। জঙ্গি নামের হাতিয়ারকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে ঘায়েল করতে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রতিযোগিতা চলছে জঙ্গি ইস্যুতে কে আগে মাঠে নামতে পারে তা নিয়ে। নিত্যদিন সভা-সেমিনারের আয়োজন করে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, তারাও এখন মাঠে থেকে সরব হচ্ছে। এমন আলোচনা, কর্মসূচি নিঃসেন্দহে সচেতনা বৃদ্ধি করবে। মানুষ সাড়াও দিচ্ছে।

তবে অনেকেই মনে করছেন, জঙ্গিবাদের এমন আলোচনার কারণে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো অনেকটাই চাপা পড়ছে। আড়ালে পড়ছে জাতীয় অন্যান্য ইস্যুও। আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষ রাজনীতিকদের পাশে পেলেও এখন যেন তারা অতিথি পাখি। বানে ভাসা নিজ এলাকার মানুষদেরও আর খবর রাখার যেন সময় নেই তাদের। সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষের মনেও যেন আর কোনো দাগ কাটছে না।

উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে প্রায় সপ্তাহ দুই আগে। তিস্তা, যমুনা, করতোয়ার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরে। বন্যার পানি যেখানে কমছে, সেখানে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দুর্গত এলাকার মানুষের নানা দুর্ভোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোয় খবর বেরোচ্ছে। অথচ এমন দুর্ভোগেও সরকার দৃশ্যত কোনো জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে দুর্গত এলাকার মানুষের অভিযোগ।

কথা হয় লালমনিরহাটের সানিয়াজান ইউনিয়নের পারসেখ সুন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষীকা সাহিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্কুল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুলের আশপাশের প্রতিটি বাড়ি নদীগর্ভে। আমরা দিশেহারা। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমাদের কথা কেউ ভাবছেও না।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা সাজু আহমেদ বলেন, গত বছরই ভাঙনে বাড়ির ভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়ে যে জায়গায় উঠেছিলাম, তাও এবার পানির নিচে। তবে এ বিষয়ে কাউকে কোনো পদেক্ষেপ নিতে দেখিনি। খাবারের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। অথচ ঢাকায় ঘুরলে-ফিরলে জঙ্গিবাদ ছাড়া আর কোনো কথা নেই। দেশে এমন বন্যা হচ্ছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।

একই এলাকার সেলিনা আক্তার বলেন, আমাদের বাড়ি তিনদিন ধরে পানির নিচে। চুলা জ্বালাতে পারছি না। চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে। অনেকের তাও মিলছে না। নদীর পানি সব কাইড়া নিচ্ছে। এরপরও মানুষের মুখে খালি জঙ্গি আর জঙ্গি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারেরর সঙ্গে। তিনি বলেন, জঙ্গি ইস্যু নিঃসন্দেহে জাতীয় সমস্যা। আমরা অবশ্যই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চাই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, জঙ্গি ইস্যুর কারণে জাতীয় অন্যান্য ইস্যু চাপা পড়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। সেদিকে কারো নজর নেই। জঙ্গিবাদ নিয়ে অপরাজনীতি হচ্ছে বলেই সাধারণ মানুষের জীবন-মরণের বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog