উত্তরাঞ্চল ঘুরে: ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পান্তা পাড়া এলাকা। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, পারটেক্স শো-রুমের পাশে একটি বাড়ি। টিনশেড বাড়ির গেট খুবই মজবুত। বাইরের দিক থেকে এ বাড়ির ভেতরের কিছুই নজরে পড়ার সম্ভাবনা নেই। বাড়ির সামনে একটি হজ এজেন্সির সাইনবোর্ড। বাড়িটি রহস্যময়। এ বাড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হতো বলে এরই মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ি হওয়ায় এ নিয়ে এখন মুখ খুললে না কেউই। বাড়ির মালিক গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার। সবাই তাকে চেনেন ভেলা কমিশনার নামে।
এই বাড়ির পেছনেই খলিশা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ারের বাড়ি। শোলাকিয়ার কাছে জঙ্গি হামলায় ধরা পড়া শফিউল ওরফে শরিফুল ওরফে সোহান ওরফে মুত্তাকিল এই আনোয়ারের বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে।
অনসন্ধানে জানা গেছে, শফিউলের বর্ণনা দেওয়া টিনশেড প্র্রশিক্ষণ শিবির ভেলা কমিশনারের বাড়িটি। আনোয়ারের বাড়িতে থাকলেও সামনের বাড়িতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতো শফিউলরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শফিউল আটক হওয়ার পর আনোয়ার ও ভেলা কমিশনারের বাড়িতে অভিযান চালায় সাদা পোশাকের পুলিশ। এ সময় দুই বাড়ি থেকে একাধিক সন্দেহভাজনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। এদেরই একজন আনোয়ারকে গত শুক্রবার রাতে গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ৠাব। তবে ভেলা কমিশনারের বাড়ির ব্যাপারে মুখ খুলছে না কেউই।
আটক আনোয়ার উপজেলার খলসি দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষক। ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামায়াতের কাছে পুলিশের উপর হামলার পর গ্রেপ্তার মাদ্রাসাছাত্র শফিউল বলেছিলেন, গোবিন্দগঞ্জে আনোয়ারের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছিলেন তিনি। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে। তিনি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। শফিউলকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-১৪ এর কর্মকর্তা মেজর সাইফুল সাজ্জাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আলিম পরীক্ষা শেষ না করেই ‘ওস্তাদের নির্দেশে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে’ কিশোরগঞ্জে গিয়েছিলেন এই তরুণ।
তিনি গোবিন্দগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষক আনোয়ারের বাড়িতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ছিলেন বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
র্যাব কর্মকর্তা কায়সার আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার জানিয়েছেন, তিনি জঙ্গি শফিউল ও তার কথিত এক ভাইকে ছাড়া কাউকে চেনেন না।
আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শেখানে প্রশিক্ষণ কাজ চালানোর মতো তেমন কোন পরিবেশ নেই। একটি আধাপাকা টিনশেড ঘরে সামনের দিকের অংশে শফিউল থাকতেন। পেছনের অংশে পরিবার নিয়ে থাকেন আনোয়ার।
আনোয়ারের স্ত্রী তুহিন বেগম জানান, শফিউল তার ছোট একটি সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকত। তাকে ভাড়াটে হিসেবেই চিনতাম।
পুলিশ বলছে, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যাকাণ্ডেরও আসামি শফিউল। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তরুণ দত্ত ও দেবেশ চন্দ্র হত্যায়ও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, ভেলা কমিশনারের বাড়ি সম্পর্কে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভেলা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করলেও তার কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই।
তবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকার জন্য যে কারো সঙ্গে যা ইচ্ছা করতে পারেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার তার বাড়িতে গেলেও ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ মেলেনি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
তবে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, যে বাড়িতে শফিউল থাকতো, সেই বাড়িটি চিহ্নিত হয়েছে। বাড়িওয়ালাকেও আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষণের যে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, টিনশেড বাড়ির সংখ্যা তো অনেক। গোবিন্দগঞ্জ শহরের প্রায় পুরো এলাকাতেই এমন টিনশেড বাড়ি রয়েছে।