ঢাকা: বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের রাজধানীর ধানমণ্ডির বাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া আদালতের নির্দেশে আটকে গেছে। আগামী ৩ মাসের জন্য এ নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে সোনালী ব্যাংকে।
জিএমজি এয়ারলাইন্সের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সালমান এফ রহমানের বাড়ি নিলামে বিক্রি করতে গত ১২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় সোনালী ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বুধবার (০৩ আগস্ট) বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকের লোকাল অফিসে রক্ষিত বাক্সে ক্রয়ের দরপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) আদালত এ বিষয়ে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আর নিলাম ডাকতে পারছে না সোনালী ব্যাংক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক ফনীন্দ্র ত্রিবেদী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অফিস শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে নিলাম প্রক্রিয়া আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখতে আদালতের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি’।
তিনি আরও বলেন, নিলাম ডাকার আগে পাওনা আদায়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত তাগাদা ও উকিল নোটিশসহ যা যা করার সবই করা হয়েছে। কিন্তু তারা টাকা না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বন্ধকি সম্পত্তি নিলাম করে টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তিন মাসের জন্য আবার আটকে গেল।
পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গত ৩০ মে পর্যন্ত জিএমজির কাছে ব্যাংকের মোট পাওনা ২২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় জিএমজি এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, পিতা মরহুম ফজলুর রহমান, মাতা মরহুমা সৈয়দা ফাতিনা রহমানের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধানমণ্ডির ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর প্লটের (নতুন) ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির নির্মিত ভবন এবং নির্মাণাদিসহ নিলামে তোলা হবে। অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর ১২ (৩)-এর বিধান অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে, ধানমণ্ডির এ ভবনটির সামনের বাম পাশে বেক্সিমকো গ্রুপের করপোরেট অফিস, ডান পাশে বেক্সিমকোর নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য ইয়োলোর শো’রুম এবং পেছনে সালমান এফ রহমানের আবাসিক বাড়ি।
এদিকে ঋণখেলাপি হয়েও আইন লঙ্ঘন করে সম্প্রতি বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন সালমান এফ রহমান। গত ১৪ জুলাই আইএফআইসি ব্যাংকের ৩৯তম বোর্ডসভায় তাকে চেয়ারম্যান পদে পুনর্নির্বাচিত করা হয়।
কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর (সংশোধিত ২০১৩) ১৫ ধারা ৬ উপধারার (ঊ) বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি তাহার নিজের কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃহীত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ বা খেলাপি হলে ব্যাংক-কোম্পানি কর্তৃক পরিচালক নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য হইবেন না’।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে জিএমজি। এতে ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ার ৪০ টাকা প্রিমিয়ামসহ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় বাজার থেকে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জিএমজি এয়ারলাইন্স। পরের বছর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানি ছিল। এ সময়ে মোট লোকসানের পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা।
২০০৬ ও ২০০৭ সালে ১ কোটি টাকা মুনাফা দেখায়। কিন্তু ২০১০ সালে অলৌকিকভাবে বেড়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা। ওই বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা দেখায়।
২০০৯ সালে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে এ টাকা নেওয়া হয়। পরে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসতে হয়েছে। কেননা, তারা আজও টাকা ফেরত পাননি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সালমান এফ রহমানের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।