বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু শরিক এ দলটিকে জোট থেকে বাদ দেয়ার কোনো চিন্তা করছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব করলেও নীরব আছেন দলটির চেয়ারপারসন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর বিশিষ্ট নাগরিক ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খালেদা জিয়াকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে এমন পরামর্শের পরও বৈঠকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো জবাব দেননি খালেদা জিয়া।
এমনকি বৈঠক শেষ হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। অবশ্য জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এ কারণেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিবাচক। রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেই দলটিকে পাশে রাখতে চান তারা। এর আগে আওয়ামী লীগও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করার বিষয়টি বেশ কয়েকবার উল্লেখ করছিলেন বেগম জিয়া।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জামায়াতকে ছাড়তে হলে সেই সিদ্ধান্তও নেবেন তারা। সেক্ষেত্রে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে নন মা-ছেলে। ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দিলেই বিএনপির বর্তমান অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না বলেও মনে করছেন কয়েকজন নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তি দেখিয়ে তারা বলছেন, জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দিলে তো আর হুট করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো হবে না। অনির্বাচিত ও দখলদার সরকার পদত্যাগ করবে না। বিষয়টি নিয়ে আরো চিন্তা ভাবনা করা উচিত।
এদিকে বিএনপির নতুন প্রজন্ম মনে করে, বিতর্কিত দলটিকে বিএনপি জোট থেকে বাদ দেয়া উচিত। মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলটিকে বাদ দিলে বিএনপির বড় ধরনের কোনো ক্ষতি তো হবেই না বরং লাভের পাল্লাটাই ভারী থাকবে। কারণ জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিশেষ করে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত জামায়াতের ঘোরতর বিরোধী।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল জাগাে নিউজকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না। জামায়াতের উপর বিএনপি নির্ভরশীলও না, দায়বদ্ধও না। আমি মনে করি গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় জামায়াত জড়িত এটা প্রমাণ হয়নি। যদি প্রমাণিত হয় জামায়াত জঙ্গিবাদী শক্তি তাহলে তাদেরকে ছাড়তে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আওয়ামী লীগ এসব কথা বলছে। জোটভিত্তিক রাজনীতি কৌশলগত বিষয়। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিরই একটা অংশ। এটা তো চিরস্থায়ী না। বিএনপি চাইলে আলাপ আলোচনা করে জোট ভেঙে দিতে পারে। প্রয়োজন মনে করলে রাখতেও পারে।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাবেক এ সভাপতি বলেন, জোট থাকবে কি থাকবে না সেটা পরের বিষয়। ইচ্ছা করলে নিজেরা আলাপ করে পৃথক হতে পারি। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মনে করেন তিনি।
এ ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, শর্ত দিয়ে কোনো কিছু হয় না। বিএনপি চেয়ারপারসন সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, এখানে জামায়াত জাতীয় ঐক্যে শামিল হবে কি না সেটি টেবিলে বসে ঠিক হতে পারে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। যারাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলবেন তারাই এই ঐক্যে শামিল হবেন।
সাবেক সেনা প্রধান ও বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন সময় জাতীয় ঐক্যের। জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। এজন্য সবাইকেই ছাড় দিতে হবে।
জামায়াত যদি জাতীয় ঐক্য তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে দলটিকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। তারপরেও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধে আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে, শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও এ ইস্যুতে একই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে।
এরই মধ্যে শর্ত পূরণ না করায় হাইকোর্টের আদেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। দলটি এখন বলতে গেলে গোপন সংগঠন হিসাবে কাজ করছেন। প্রকাশ্যে তাদের কোনো কর্মসূচি নেই। দলীয় প্রতীকে তারা কোনো নির্বাচনেও অংশ নিতে পারছেন না।