অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, ট্রাইব্যনালে মীর কাসেমের মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যারা যুক্ত ছিলেন এবং যিনি তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন (প্রধান প্রসিকিউটর), তাদের ওই দায়িত্বে থাকা ‘উচিত নয়’ নয় বলে আপিল বিভাগ মত দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রোববার মীর কাসেমের রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, রায় প্রকাশ হলে দায়ী প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা খোদ আইনমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কী ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে- তা আদালত জানে না।
আদালতের এ বক্তব্যের সূত্র ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “১২ নম্বর অভিযোগেও সাজা হত। কেবল তাদের কারণে… তাদের ইনকম্পিটেন্সির কারণে…।”
প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, এটা মোটিভেটেডলিও হতে পারে। এটা যেন নাটক… এক অংশ একজন পরিচালনা করবেন, আরেক অংশ আরেকজন…। ট্রায়াল নিয়ে মকারি করেছেন। ভালো ভালো প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন না কেন? ভালো ভালো প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন। টাকা পয়সা দিতে কী সমস্যা?”
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উত্তরে বলেন, “ভালো প্রসিকউটর আছে। এদেরকে এই মামলায় কেন যুক্ত করা হল, সেটা বিষয়।”
পরে এ বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “মীর কাসেম আলীর মামলায় যে যে প্রসিকিউটর মামলা পরিচালনায় অংশ নিয়েছেন এবং প্রধান প্রসিকিউটর, যিনি তাদের দায়িত্ব প্রদান করেছেন- এই কয়জনের ব্যাপারে আদালত একটা অভিমত প্রকাশ করেছেন, এদের এখানে থাকা উচিত নয়।”
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপারাধের মোট ১৪টি অভিযোগ এনেছিল। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে জসিমসহ মোট আটজনকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে কাসেমকে খালাস দেওয়া হলেও ১১ নম্বর অভিযোগে জসিম হত্যার ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল থাকে।
এছাড়া আরও ছয় অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালের রায়
|
অভিযোগ
|
আপিলের রায়
|
খালাস
|
অভিযোগ ১
|
বিবেচিত হয়নি
|
২০ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ২
|
২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল
|
৭ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ৩
|
৭ বছরের কারাদণ্ড বহাল
|
৭ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ৪
|
খালাস
|
খালাস
|
অভিযোগ ৫
|
বিবেচিত হয়নি
|
৭ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ৬
|
খালাস
|
৭ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ৭
|
৭ বছরের কারাদণ্ড বহাল
|
খালাস
|
অভিযোগ ৮
|
বিবেচিত হয়নি
|
৭ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ৯
|
৭ বছরের কারাদণ্ড বহাল
|
৭ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ১০
|
৭ বছরের কারাদণ্ড বহাল
|
ফাঁসি
|
অভিযোগ ১১
|
মৃত্যুদণ্ড বহাল
|
ফাঁসি
|
অভিযোগ ১২
|
খালাস
|
খালাস
|
অভিযোগ ১৩
|
বিবেচিত হয়নি
|
১০ বছরের কারাদণ্ড
|
অভিযোগ ১৪
|
১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল
|
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকার নিযুক্ত প্রসিকিউটররাই মামলা পরিচালনা করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিলটি হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। সেখানে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল প্রসিকিউশনের পক্ষে যোগ দেন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ মামলায় প্রসিকিউশনের আইনজীবীর তালিকায় প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন, তুরিন আফরোজ, রেজিয়া সুলতানা বেগম ও তাপস কান্তি বলের নাম রয়েছে।
তবে সাক্ষ্য ও জেরায় ছিলেন জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সিমন। মূলত সাক্ষ্য ও জেরায় তাদের ভূমিকা নিয়েই আদালতকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানির ষষ্ঠ দিনও প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন বিভাগের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “মীর কাসেম আলীর মামলা এবং অন্যান্য মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের যে ইনভেস্টিগেটর (তদন্তকারী) ও প্রসিকিউটর (মামলা পরিচালনাকারী) সংস্থা আছে, তাদের কাজের ওপর আদালত গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
“এই মর্মে একটা উক্তি করেছেন, যথেষ্ট খরচ হচ্ছে এদের পিছনে, কিন্তু সে রকমভাবে, সঠিকভাবে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা করছেন না বলে তাদের কাছে মনে হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কাজ আরও সুষ্ঠুভাবে করা যেত এবং আরও ভালোভাবে মামলাটি পরিচালনা করা যেত বলে আদালত অভিমত ব্যক্ত করেছে।”
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আপিলের শুনানিতেও একই রকম প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে মাহবুবে আলম সে সময় জানান।
গাফিলতির জন্য দায়ী প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার েবলেন, “বললেই তো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এর প্রক্রিয়া আছে। আমরা বিষয়টা বিবেচনা করছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”