1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬
  • ২৮২ বার

mr-khanপ্রতিবেদক : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশে শিশু চিকিৎসায় পথিকৃৎ চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান।

রোববার সকালে গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দফা জানাজার পর বেলা পৌনে ১২টায় এম আর খানের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে চিকিৎসক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ চিকিৎসা পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রয়াত এই চিকিৎসকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

শ্রদ্ধা জানানোর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে তিনি এম আর খানকে খুব অসুস্থ অবস্থায় দেখেছিলেন। তারপরও আশা করেছিলেন, ‘আরও অনেকদিন’ বাঁচবেন এই চিকিৎসক।

“তিনি দেশবাসীকে যা দিয়ে গেছেন তার তুলনা নেই। তিনি শুধু একজন মহান চিকিৎসক নন, মহান সমাজসেবক ছিলেন। এই অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক ও দেশের অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।”

পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ মেনন বলেন, “তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন… জাতি হিসেবে আমরা একজন দেশপ্রেমিক গুণী মানুষকে হারালাম।”

নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকালে মৃত্যু হয় এই চিকিৎসকের, যিনি কর্মজীবনে বহু জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন প্রতিষ্ঠায় যুক্ত ছিলেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ কাশেম জানান, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন অধ্যাপক এম আর খান। সম্প্রতি দেশে ও দেশের বাইরে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয় তার।

স্বাধীনতা ও একুশে পদকজয়ী এই শিশু বিশেষজ্ঞের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আগেই মারা গেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শ্রদ্ধা জানাতে এসে আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকরা অধ‌্যাপক এম আর খানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কারুমল হাসান খান বলেন, “তিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রের অভিভাবক ছিলেন, দেশের চিকিৎসা খাতের কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, কীভাবে শিশুচিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায় সেই পরামর্শ তার কাছে পাওয়া যেত। তার মৃত্যুর ক্ষতি অপূরণীয়।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ইসমাইল খান বলেন, এম আর খান এ দেশে শিশু চিকিৎসার জগতে ‘আলোর দিশা’ দেখিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ‌্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ‌্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, কেবল তার নন, অধ‌্যাপক এম আর খান ছিলেন ‘সবার শিক্ষক’।

“ভালো চিকিৎসকের গুণ বোঝাতে গিয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, যদি কোনো শিশু চিকিৎসার পর মারা যায়, তারপরও যদি বাবা-মা তোমাকে কুলখানিতে দাওয়াত দেয়, তাহলে বুঝবে তুমি ভালো চিকিৎসক।”

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল, সাতক্ষীরার সাংসদ ডা. আ ফ ম রুহুল হক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব ইকবাল আর্সলান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মিজানুর রহমান এসেছিলেন অধ্যাপক এম আর খানের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে।

এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ‌্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও কুষ্টিয়া মানব উন্নয়ন কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয় এই চিকিৎসকের প্রতি।

 

পুরোটা সময় ডা. এম আর খানের কফিনের পাশে ছিলেন তার একমাত্র মেয়ে দৌলতুন্নেসা ম্যান্ডি। সকলের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, “আমরা বাবা যদি কারও সঙ্গে খারাপ কিছু করে থাকেন, মাফ করে দেবেন।”

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মিরপুরে এম আর খান প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এ নেওয়া হবে তার কফিন। পরে নেওয়া হবে তার হাতে গড়া উইমেন্স মেডিকেল কলেজে। দুই জায়গাতেই তার জানাজা হবে।

পরে এম আর খানের মরদেহ নেওয়া হবে সাতক্ষীরায় তার গ্রামের বাড়িতে। পথে যশোর শিশু হাসপাতাল এবং সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল আরও দুই দফা জানাজা হবে।

শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সাতক্ষীরা শহরতলীর রসুলপুর গ্রামে বাবা-মা ও স্ত্রীর পাশে এম আর খানকে দাফন করা হবে বলে জানান তার মেয়ে।

শহীদ মিনারে উপস্থিত চিকিৎসকরা জানান, দাফনের বিষয়টি নির্ভর করছে কফিন সাতক্ষীরায় পৌঁছানোর ওপর। তবে সোমবার সকাল ১০ টার মধ‌্যে দাফন সম্পন্ন হতে পারে বলে তারা আশা করছেন।

১৯২৮ সালের ১ অগাস্ট সাতক্ষীরা শহরতলীর রসুলপুর গ্রামে জন্ম মোহাম্মদ রফি খানের, কর্মজীবনে তিনি এম আর খান নামেই বেশি পরিচিতি ছিলেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় সব সম্পত্তিই তিনি দান করেছেন সাতক্ষীরা জেলার মানুষের জন‌্য।

মৃত‌্যুর আগে সেন্ট্রাল হাসপাতালের চেয়ারম‌্যান ও ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক এম আর খান। শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, মিরপুরের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল, সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, যশোরের শিশু হাসপাতাল তার হাতেই গড়া।

চিকিৎসায় অবদানের জন্য চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন এম আর খান। গত ২৪ মার্চ এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাধীনতা পদক পরিয়ে দেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে এম আর খানের ৩৭টি গবেষণাধর্মী রচনা প্রকাশিত হয়েছে। শিশুরোগ চিকিৎসা সংক্রান্ত সাতটি বই লিখেছেন, যেগুলো দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog