আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের বগির মধ্যে নিখোঁজদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন স্বজনরা; আশপাশে আহত মানুষের আর্তনাদ। ভারতের কানপুরের পুখরাইয়ায় ইন্দোর-পাটনা রেলপথের বাতাস ভারি হয়ে আছে শতাধিক মৃত্যুর আকস্মিকতায়।
গভীর রাতে প্রচণ্ড ঝঁকুনিতে ঘুম ভাঙার পর চোখের সামনে মৃত্যু দেখেও যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাদের বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছে না কিছুতেই।
স্থানীয় সময় শনিবার রাত ৩টার দিকে কানপুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে পুখরাইয়া এলাকায় ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুচড়ে তালগোল পাকিয়ে যায় বগিগুলো।
এ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। দুই শতাধিক যাত্রীকে আহত অবস্থায় পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, এখনও অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের খোঁজে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বগিগুলোর মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
আর দশদিন বাদে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ২০ বছর বয়সী রুবি গুপ্তের। কিন্তু পুখরাইয়ার দুর্ঘটনা তার জীবনকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।
বিয়ের সাজ-সরঞ্জাম আর গয়না কিনে বাবা আর চার ভাই-বোনকে নিয়ে আজমগড়ে ফিরছিলেন রুবি। দুর্ঘটনার পর থেকে বাবাকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। দুই বোন অর্চণা, খুশি আর দুই ভাই অভিষেক, বিশাল আহত; নিজের হাতও ভেঙেছে। তারপরও হন্যে হয়ে বাবাকে খুঁজছেন এই তরুণী।
“বাবাকে সব জায়গা খুঁজেছি, কোথাও পাচ্ছি না। কয়েকজন আমাকে বলেছে হাসপাতাল আর মর্গে খোঁজ নিতে, কিন্তু কি করব- বুঝতে পারছি না।”
এনডিটিভিকে রুবি বলেন, বিয়ে পরে; আগে তার বাবাকে ফিরে পেতে হবে।
“আমি জানি না, এ অবস্থায় আমার বিয়ে হবে কিনা। কিন্তু এ মুহূর্তে আমি বাবাকে ফিরে পেতে চাই।”
দুর্ঘটনার অনেকক্ষণ পরও ধ্বংসস্তুপের আশপাশে আহত অনেককে হতবিহ্বল বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকেই বলেছেন, কীভাবে প্রাণে বেঁচেছেন, তা তারা জানেন না।
এমনই একজন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি, আমি সিট থেকে ছিটকে পড়লাম। পতনের অনুভূতি আমার এখনও কাটেনি। আমার সঙ্গে থাকা পাঁচজন এখনও নিখোঁজ, আমি তাদের কথা ভেবে শঙ্কিত।”
মাকে ছাড়াও আরও কয়েকজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না পাটনার এক যাত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম ট্রেনটি লাইন থেকে ছিটকে যাচ্ছে। আমার আঘাতটা মারাত্মক। আমি এখনও মাকে খুঁজে পাইনি। আশা করি তিনি বেঁচে আছেন।”
ইন্দোরের আরেক যাত্রীও তার দুই ভাই আর তিন বোনকে খুঁজছেন। তারা আদৌ বেঁচে আছেস কিনা- তাও জানেন না তিনি।
ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
মোদী নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দুই লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী যাদব নিহতদের পরিবারপিছু পাঁচ লাখ রুপি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার ও কম আহতদের ২৫ হাজার রুপি করে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
এছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে সাড়ে তিন লাখ রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।