প্রতিবেদক : ঢাকার আশকোনায় পুলিশি অভিযানের সময় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের জীবিত অবস্থায় বের করে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। রোববার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইল গীর্জার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
নিহত ও আত্মসমর্পণকারী সবাইকে ‘একটি জঙ্গি পরিবার’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে জঙ্গি কার্যক্রম চলমান রয়েছে এটা তারই একটি ধারাবাহিকতা। যে দুজন মারা গেছে… তাদেরকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল। যে কারণে আমরা প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছি।”
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আশকোনার ওই জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয় জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে জেএমবি বা নব্য জেএমবির যারা উগ্রবাদি নাশকতা চালাচ্ছে, তারা ‘নিজেদের আইএস বলে দাবি করলেও’ এর সমর্থনে তেমন কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। এরা প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক দল না। এদের কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। তাই গোপনভাবে কে কোন রোল পালন করছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না।”
পূর্ব আশকোনায় হজ ক্যাম্পের কাছে সূর্যভিলা নামের ওই তিন তলা বাড়িতে শনিবার প্রথম প্রহরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়, শেষ হয় বিকালে।
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
দীর্ঘ সময় ওই বাড়ি ঘিরে রাখার পর পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুই নারীও দুই শিশু আত্মসমর্পণ করে।
পুলিশ বলছে, ওই চারজন জঙ্গিনেতা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও তার মেয়ে এবং জঙ্গিনেতা মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার মেয়ে। তারা আত্মসমর্পণ করলেও আরও এক নারী, এক শিশু ও এক কিশোর ওই বাড়ির ভেতরে থেকে যায়।
তারা আরেক জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী, আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরীর ছেলে (১৪) ও জঙ্গি ইকবালের মেয়ে (৪) বলে পুলিশের ভাষ্য।
এরপর বেলা ১টার দিকে মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে সুমনের স্ত্রী বেরিয়ে আসেন এবং বোরকার ভেতরে কোমরে বাঁধা গ্রেনেডে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন বলে পুলিশের তথ্য।
বিস্ফোরণে আহত শিশুটিকে তখনই উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মেয়েটি এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়।
দক্ষিণখান থানার ওসি তপন কুমার সাহা জানিয়েছেন, জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরীর ১৪ বছর বয়সী ছেলের লাশ এখনও ওই বাসায় পড়ে আছে। ওই কিশোরকে এলাকাবাসী চিনত শহীদ কাদেরী নামে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “এরা প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক দল না। এদের কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। তাই গোপনভাবে কে কোন রোল পালন করছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এটা তারই একটি ধারাবাহিকতা।”
আত্মঘাতী নারী জঙ্গিদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এর আগেও নারী জঙ্গির সন্ধান আমরা পেয়েছি। জঙ্গি পরিবার যারা- সেখানে পুরুষ-নারী উভয়ই মোটিভেটেড হতে পারে। এটা নতুন কিছু না- একটি জঙ্গি পরিবারের সদস্য এরা।”
জঙ্গি মুসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সে জঙ্গিদের একজন। সে আমাদের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাকে ধরার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সে বাংলাদেশেই আছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য।”