প্রতিবেদক : মামলাজটকে দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে তুলনা করে এ থেকে মুক্তি পেতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনের শুরুতে অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “মামলাজট ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা শিথিল হতে পারে। সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতের প্রসার ঘটতে পারে।
“আমাদের অবশ্যই মামলাজটের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হবে। এ জন্য আমাদের পরিহার করতে হবে অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি। আদালতের পুরো সময় বিচারকাজে ব্যয় করতে হবে।”
নিম্ন আদালতগুলো ২৭ লাখ মামলার জট বয়ে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় মামলাজট ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা জনগণের বিচার লাভের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। মামলাজট ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে বেড়ে যেতে পারে মোকদ্দমার ব্যয়।
“আর এ কারণে মানুষ তার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালতে আসতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। বেছে নিতে পারে বিচার বহির্ভূত পন্থা। অর্থ ও পেশি শক্তির মাধ্যমে সুবিধাজনক সমাধান প্রাপ্তিতে উৎসাহিত হতে পারে।
অবকাঠামোগত ঘাটতিসহ নানা সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে মানসম্মত সুবিচার নিশ্চিত করতে জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান বিচার বিভাগের প্রধান।
‘জেলার বিচার ব্যবস্থায় সামগ্রিক মানোন্নয়নের দায়িত্ব জেলা জজের’ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যক্তিগত বিবাদে না জড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, “এটা জেনে আমি ব্যথিত হয়েছি যে, কোনো জেলার জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এটি জেলার সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জ্যেষ্ঠ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ তার প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।”
জেলা জজদের শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “ঢাকার বাইরে কর্মরত কোনো কোনো জেলা জজ প্রায়ই ঢাকা শহরে দৃশ্যমান হন। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জেলা জজ নিজে সঠিক সময়ে আদালতে আসবেন। পুরো বিচারিক সময় বিচার কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
“কোনো কোনো জেলা জজ ও তার অধীনস্থ বিচারকের পরিবার ঢাকায় থাকেন। তাদের মধ্যে কিছু জজ ও তার অধীনস্থ বিচারক বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রোববার দুপুরে ফিরে যান কর্মস্থলে। কোনো কোনো জেলা জজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সরকারি গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে ভ্রমণ করেন। কেউ কেউ নিজের গাড়ি না নিয়ে অন্য আদালতের গাড়ি ব্যবহার করেন। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আদালতের কার্যতালিকার বিন্যাসে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় কর্মঅধিবেশনে উপস্থিত আছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীসহ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারকরা।
জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, অতিরিক্ত দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি) বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন।