1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha :
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার সালতামামি

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ১৫৩ বার

প্রতিবেদক : ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল জঙ্গিবাদ। বছর শুরু হয়েছিল জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের মধ্য দিয়ে।  এই সফর বাতিলের আগে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার ও জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও হত্যায় বিশ্ববাসীর নজর পরে বাংলাদেশে। সেসময় কয়েকজন বিদেশী নাগরিক হত্যার ফলে জঙ্গিবাদের হুমকি আছে এমন কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে অষ্ট্রেলিয়া।

আশঙ্কাটি সত্যে পরিনত হয় জুলাইয়ে হোলি আর্টিসানে হামলার মধ্য দিয়ে। এই হামলাটি শুধু বাংলাদেশকে নাড়া দেয়নি। বিশ্বকেই ভাবিয়ে তুলেছিলো।

কয়েক বছরের বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার পর এবছরই বাংলাদেশে চালানো হয় বাংলাদেশে এযাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা- গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে।পহেলা জুলাই রাত ৯টার কিছু আগে কিছু দল সশস্ত্র যুবক ঢুকে পড়ে গুলশান-২ এলাকার হলিআর্টিজান রেস্টুরেন্টে। রেস্টেুরেন্টে অবস্থানরত সবাইকে তারা জিম্মি করে ফেলে। স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যেতেই জঙ্গিদের গুলিতে মারা যায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা। গোটা এলাকা ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। রাত ৩টার পর অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায় সেখানে। ভোরে সেনাবাহিনীর ৮টি সাঁজোয়া যান আসে ঘটনাস্থলে। সেখানে গোটা এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় সেনা সদস্যরা। তারপর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় অপারেশন থান্ডারবোল্ট। ১৩ মিনিটের ঐ কমান্ডো অপারেশনের মধ্য দিয়ে জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জনকে। নিহত হয় ৬ জঙ্গি। তবে এর আগে জঙ্গিরা হত্যা করে ১৮ বিদেশি এবং ৩ বাংলাদেশি নাগরিককে। বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন ইতালির ৯ জন, জাপানের ৭ জন এবং ভারতের ১ জন। ঘটনার বিভৎসতায় হতবাক সারাবিশ্ব।

এই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই ৬ দিনের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে আক্রমণ করে বসে জঙ্গিরা। শোলাকিয়ার ঈদগাঁহ’র মাঠ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ঈদ জামাত শুরুর আগে সকাল পৌনে ৯টায় পুলিশের ওপর বোমা ও চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় ২ জঙ্গি। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে জঙ্গিরা পিছু হঁটে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। ঐ ঘটনায় নিহত হয় ২ পুলিশসহ ৪ জন।

ক্রমাগত জঙ্গি হামলায় ২০১৬ সালে গোটাবিশ্ব বাংলাদেশকে দেখেছে ভিন্নরূপে। তবে জঙ্গিবাদের এই কালিমা মুছে বছর জুড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
মুক্তমনা নাগরিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিদেশি নাগরিকদের কুপিয়ে হত্যার যে ধারা আগে থেকেই চলছিল তা ২০১৬ সালের শুরু থেকে অব্যাহত ছিল। তবে পহেলা জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার আগের তিন মাস পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়ে পড়ে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদকে গত ৬ এপ্রিল গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের মতে, নাজিম ধর্মবিরোধী বা ব্লগার ছিলেন না। তবে বিভিন্ন সময়ে মতামত তুলে ধরে ফেসবুকে সত্রিুয় থাকতেন। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীও ছিলেন সামাদ।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ২২ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে সাধু পরমানন্দ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য বা কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না বলে দাবি পরিবারের। তবে বাসুরিয়া রসরাজ ঠাকুরের অনুসারী ছিলেন তিনি। সেখানে সনাতন ধর্মের তপস্যা করতেন।

চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় বাড়ির কাছেই নির্মমভাবে কুপিয়ে তাকে খুন করা হয়। অধ্যাপক রেজাউল ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এবং ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন।

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের কয়েকশ গজ দূরে প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলীকে গত ২৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রুস্তম আলী ‘সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর’ পদে ছিলেন।

একই কায়দায় খুন হন ঢাকায় সমকামীদের অধিকার বিষয়ক পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক ও মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজ এবং তার বন্ধু তনয়।

রাজশাহীতে গত ৭ মে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শহিদুল্লাহ নামে এক ‘পীর’কে। গোয়ালন্দঘাটের পীর নূর মোহাম্মদ দয়ালের ভক্ত ছিলেন শহিদুল্লাহ। এ ঘটনায় মামলা হলেও রহস্য উদঘাটিত হয়নি।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মং শু হুক (৭৫) নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৪ মে সকালে বাইশরি বৌদ্ধবিহারের ভেতর তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। জানা যায়, দুই বছর আগে বৌদ্ধমন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভিক্ষু মং শু হু সেখানে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
৫ থেকে ১০ জুন এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছিল। যেখানে মূল টার্গেট ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিক।

এদিকে পহেলা জুলাইয়ের  গুলশান এবং শোলাকিয়া হামলার পরবর্তী ৬ মাস দেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বেশ কয়েকটি বড় বড় অভিযান লক্ষ্য করা গেছে।
২৬ জুলাই কল্যাণপুরে রাতভর অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন স্ট্রং-২৬।
২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে হিটস্ট্রং-২৭ নামের একটি অপারেশনে নিহত হয় ৩ জঙ্গি। যাদের মধ্যে ছিল তামিম চৌধুরী। যাকে গুলশান হামলার মূলহোতা হিসাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী চিহ্নিত করেছিল।
১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুরের অভিযানে ১ জঙ্গি নিহত হয় এবং ধরা পরে চিহ্নিত জঙ্গিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
৮ অক্টোবর একইদিনের অপারেশনে গাজীপুর, টাঙ্গাইল এবং আশুলিয়ায় ১২ জঙ্গি নিহত হয়।
শনিবার ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর পূর্ব আশকোনায় ডিএমপি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জঙ্গি বিরোধী অভিযানে ২জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, জঙ্গি সুমনের স্ত্রী শারিকা (৩০) ও আজিমপুর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তানভির কাদরির ছেলে আদর (১৪)। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন রিপল-২৪’।
এদিকে গুলশান এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বছরের শেষ ৬ মাসে আর একটিও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি যা বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।
সব মিলিয়ে বলা যায় আর ২০১৬ শেষ হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের বাংলাদেশ সফরও আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Mohajog