প্রতিবেদক : পলিথিন নিয়ে পরিবেশের দুশ্চিন্তা কাটছে। পাটজাত বর্জ্য থেকে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির সফলতা এসেছে, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন গবেষকদের হাত ধরে। যা বিশ্বে নতুন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিজস্ব পদ্ধতির এই উদ্ভাবন পরিবেশ ও মানবদেহকে পলিব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাব থেবে বাঁচাবে; এগিয়ে নেবে রপ্তানি বাণিজ্যকেও।
পলিথিন পরিবেশের শক্র। এর খারাপ দিক নিয়ে পুরো বিশ্বের মতো সোচ্চার বাংলাদেশও। ২০০২ সালে আইন করে নিষিদ্ধও করা হয়েছে এর উৎপাদন-বাজারজাতকরণ-বিক্রয়। কিন্তু থেমে নেই এর ব্যবহার। পলিব্যাগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিবছর বিশ্বে এর ব্যবহার হয় এক ট্রিলিয়ন মেট্রিক টক। প্রতি এক মিনিটে বিশ্বে ব্যবহার করা হয় প্রায় এক মিলিয়ন পলিব্যাগ। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে হিসেবে, খোদ ঢাকাতেই মাসে প্রায় ৪১ কোটি পলিব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিবছর বিশ্বে এক মিলিয়নের বেশি পাখি এবং লক্ষাধিক জলজ প্রাণীর ধ্বংসের কারন এই পলিইথিলন বা প্লাসটিকের ব্যবহার। শুধু তাই নয় বুড়িগঙ্গা নদীর নিচে ৫-৬ ফিট পলিব্যাগের স্তরের কারনে হুমকির মূকে জীব বৈচিত্র। আর অনেক রপ্তানীপণ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাতিল হয়ে যায়- শুধু অপচনশীল পলিব্যাগে মোড়কের কারনে।
এমন পরিস্থিতি থেকে উৎরাতে পৃথিবীব্যাপী চলছে নানা গবেষণা। থেমে ছিল না বাংলাদেশও। এবার সেই চেষ্টায় এসেছে সফলতা। পাটজাত বর্জ্য থেকে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের গবেষকরা। পাট থেকে পলিব্যাগ তৈরির এই ধারণা বিশ্বে নতুন।
পাট বা পাটজাত বর্জ্য থেকে নেয়া হয়েছে পলিব্যাগের জন্য সেলুলোস। কৃত্রিম উপায়ে এই এটি তৈরি ব্যয়বহুল। তবে পাট আমাদের দেশীয় পণ্য হওয়ায় বেঁচে যাবে অর্থ। এর সাথে খুব কম দামের কেমোসিনথেটিক মিলিয়ে ফেলতে হয়। দুটি দ্রবণ অল্প আঁচে গলিয়ে আবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর পছন্দ মতো রঙ মিশিয়ে ছাঁচে ফেলে তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব এই পলিব্যাগ।
সাধারণ কাগজ যেখানে মাটিতে পঁচতে ১২ থেকে পনের মাস সময় লাগে, সেখানে নতুন উৎপাদিত এই পলিব্যাগ মাত্র ২ থেকে ৩ মাসেই মাটিতে মিশে যাবে। উদ্ভাবকরা বলছেন, এই পলিব্যাগ স্বাস্থ্যসম্মতও।
সারাবিশ্বই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে পলিব্যাগের ক্ষতিকর দিক নিয়ন্ত্রণে, সেখানে নতুন এই উদ্ধাবন সবাইকে আশার আলো দেখাতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই পলিব্যাগ মানবদেহকে রক্ষা করতে পারে ক্যান্সার আর চর্ম-যৌন রোগের ভয়াবহতা থেকে, পরিবেশকেও রক্ষা করবে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে।