প্রতিবেদক : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় একটি লেভেল ক্রসিংয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের সঙ্গে প্রাইভেট কারে ধাক্কায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর কিছুদূর গিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ এবং ময়মনসিংহের পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আব্দুল মোতালেব মিয়া জানান, রেললাইনের ওপর দিয়ে গ্রামের রাস্তায় ওই ক্রসিংয়ে কোনো বাঁশকল ছিল না। গাড়ির চালক খেয়াল না করে রেললাইনে উঠে পড়েন এবং ওই পথে দ্রুত গতিতে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেসের সামনে পড়ে যায় ওই গাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষের পর প্রাইভেটকারটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে আটকে যায়। ওই অবস্থায় আটকে থাকা গাড়িটি নিয়েই প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত এগিয়ে যায় ট্রেনটি। এ সময় গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে যায়।প্রায় দেড় কিলোমিটার এগিয়ে যাওয়ার পর ট্রেন একটি সেতুতে উঠলে নিচে ফাঁকা জায়গা পেয়ে প্রাইভেট কারের ভাঙা বিভিন্ন অংশ নিচে পড়ে। রেলসেতুর নিচে কংক্রিটের প্ল্যাটফর্মে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সেতু পেরিয়ে আরও আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয় বলে জানান ওসি।
নিহতরা হলেন- প্রাইভেট কারের ভিতরে থাকা গোয়ালবাথান গ্রামের রিপনের স্ত্রী নুসরাত জাহান লাকি আক্তার (৩৬), তাদের ছয় বছরের মেয়ে রুবাইদা নুশরাত রিভা, রিপনের চাচাত ভাই বিদ্যুতের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (৩০) ও তাদের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে তহসিন আহমেদ তালহা এবং চালক মিনহাজ উদ্দিন (৪৫)।
রিভা স্থানীয় একটি মিশনারি স্কুলে প্লে গ্রুপ এবং তালহা নার্সারিতে পড়ত। রিপনের প্রাইভেট কারে করে তারা স্কুলে যাচ্ছিল বলে এস আই রাসেল জানান।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর লাইন আটকে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকাগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ও চাঁপাই এক্সপ্রেস এবং উত্তরবঙ্গগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ও নীলসাগর এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি ট্রেন আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে।
মৈত্রী এক্সপ্রেসের লাইচ্যুত বগিটি উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে শহীদুল বলেন, লাইন মেরামত হলেই ট্রেন চলাচল আবার শুরু হবে। স্থানীয়রা জানান, পৌরসভা থেকে কয়েক বছর আগে ১২ ফুট চওড়া ওই গ্রামের রাস্তায় পিচ ঢালাই করে দেওয়া হলেও কোনো রেলগেইট দেওয়া হয়নি।
সেখানে কেবল একটি সাইনবোর্ড বসিয়ে সবাইকে নিজ দায়িত্বে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গতবছরও ওই ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় জানিয়ে শাজাহান মিয়া বলেন, “আমরা ব্যারিয়ার বসানোর দাবি জানিয়ে এলেও আজ পর্যন্ত তা দেয়নি।”