প্রতিবেদক : রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ বাতিল ও সুন্দরবন রক্ষাসহ ৭ দফা দাবিতে তেল-গ্যাস ও বন্দর-বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা হরতালের সমর্থনে শাহবাগে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৬টার দিকে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা টিএসসি মোড় থেকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তায় গিয়েই তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
এক পর্যায়ে সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ পিছিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের কাচ ভাংচুর করে।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হরতালকারীরা মিছিল নিয়ে আবার শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বাধা পেয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা চারুকলা অনুষদের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন এবং সেখানে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
এরপর সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যতবারই বিক্ষোভকারীরা শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবারই পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের হটিয়ে দিয়েছে। কয়েক দফা ব্যবহার করা হয়েছে জল কামানও। জবাবে পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক জি এম জিলানী শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইভা মজুমদারসহ বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনের দেড়শতাধিক নেতাকর্মীকে এই বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে লাকী আক্তার রাবার বুলেটে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া।
প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল কবীর বলেন, “আমাদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার শেল ছুড়েছে, রাবার বুলেট ছুড়েছে।”
শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “বিক্ষোভ মিছিল করে তারা শাহবাগের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। থানার সামানে আমাদের ব্যারিকেড আছে।” কয়েক দফা টিয়ারশেল ছোড়া হয়েছে স্বীকার করলেও রাবার বুলেটের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি ওসি।
তিনি বলেন, “বিক্ষোভকারীদের শাহবাগ মোড়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আশপাশে কয়েকটি হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ কারণেই পুলিশ বাধা দিয়েছে।
এদিকে কাঁদুনে গ্যাস থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারীরা চারুকলা অনুষদের ভেতরে অবস্থান নিলে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সেখানেও অন্তত ৬টা টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে গ্যাস থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছে।”
এ সময় চারুকলার লাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের একটি ঘরের ওপর একটি টিয়ারশেল এসে পড়লে ওই ঘরে থাকা দেড় বছরের একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।
হরতাল শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ সারা দেশে রাজপথে অবস্থান ও খুলনায় মহাসমাবেশের তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
তিনি জানান, হরতালের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিলে ‘পুলিশি হামলা ও ত্রাস সৃষ্টির প্রতিবাদে’ ২৮ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ‘সুন্দরবন-বিনাশী’ সব প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
এছাড়া আগামী ১১ মার্চ খুলনা মহানগরীতে ‘উপকূলীয় মানুষদের নিয়ে’ হবে মহাসমাবেশ।
হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে পল্টন, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় ও আশপাশের সড়কে মিছিল করে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে সিপিবি, বাসদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিসহ কয়েকটি সংগঠন পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে সকাল সোয়া ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মতিঝিলমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও পল্টন ছাড়া ঢাকার অন্য সব এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে নগর পরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। পল্টনের অবস্থান শেষে বেলা ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অন্যদের মধ্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সমাবেশে বক্তব্য দেন।