প্রতিনিধি : যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কমাতে এবার ডিভি লটারি বিলুপ্তি ও পারিবারিক কোটা সীমিত করার বিল এনেছেন দুই রিপাবলিকান সিনেটর। আরকানস’র টম কটন এবং জর্জিয়ার ডেভিড পারডিউ মঙ্গলবার সিনেটে বিলটি উত্থাপন করেন।
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যে ৫০ হাজার ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন, এই প্রস্তাব পাস হলে তা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া গ্রিনকার্ড পাওয়া অভিবাসীরা কেবল তাদের স্বামী/স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং অসুস্থ বাবা-মাকে নাগরিক করার আবেদন করতে পারবেন।
পারিবারিক কোটার সুবিধা নিয়ে এতদিন গ্রিনকার্ডধারীরা তাদের ভাই-বোন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দেরও নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে পারতেন। যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ লাখ লোক অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পেত বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। নতুন বিলটি অনুমোদ পেলে এ সংখ্যা বহু অংশে কমে আসবে।
অবশ্য পেশাদারী ভিসায় (এইচওয়ানবি) যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এ বিল প্রভাব ফেলবে না। এ বিলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশের ধারবাহিকতা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
দুই সপ্তাহ আগে ওই আদেশে পরবর্তী চারমাসের জন্য সব ধরনের শরণার্থী এবং তিন মাসের জন্য সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। সিরিয়ার ক্ষেত্রে ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়।
ওই আদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তীব্র সমালোচনার মধ্যে সিয়াটলের একটি আদালত ওই নির্বাহী আদেশের একটি অংশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়। হোয়াইট হাউজ অবশ্য কটন ও পারডিউর বিল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এক মুখপাত্র জানান, তারা বিলটি আরও পর্যালোচনা করে পরে মন্তব্য করবেন। তবে কটন জানিয়েছেন, বিল উত্থাপনের আগেই এ বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে।
এনডিটিভি বলছে, রিপাবলিকান পার্টির একটি অংশের কাছে ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসনবিরোধী নীতির গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ এই বিল। কটন ও পারডিউকে ট্রাম্পের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যাননের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোতে।
বিল উত্থাপনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে টম কটন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক-কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করেই তারা অভিবাসন সীমিত করার বিলটি এনেছেন।
“যখনই কেউ অভিবাসী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন, তিনি গ্রিনকার্ড পেয়ে যান। এরপরই স্বামী/স্ত্রী, মা-বাবা এবং সেই সূত্রে ঘনিষ্ঠ সকলকে বৈধভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে আনার পথ সুগম হয়; যা আমেরিকার শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য কোনোভাবেই শুভ নয়।”
অবশ্য রিপাবলিকান সিনেটরদের অনেকেই যে অভিবাসন বিষয়ে একই মনোভাব পোষণ করেন না, তা স্বীকার করেছেন কটন। ডেমোক্রেটরাও এ বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন।
“তবে আমরা আশাবাদী, বিলটি এ বছরের কোনো এক সময়ে ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে,” বলেন কটন।
এদিকে নতুন এ বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইমিগ্রেশন লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের অ্যাটর্নি মার্ক সিলভারম্যান।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যখন তুমুল বিক্ষোভ চলছে, যখন এ প্রক্রিয়া আদালতেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তখন এ ধরনের বিল পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করবে।
“এ ধরনের অ-আমেরিকান কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে একদিন হয়ত ওরা স্ট্যাচু অব লিবার্টিও উচ্ছেদ করবে। নাগরিক হওয়া অভিবাসীদের সবকিছু কেড়ে নিতে চাইবে।”
যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি খোরশেদ খন্দকার ও আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার ওই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে। সংবিধানেও অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত রয়েছে।
আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পরাজিত করে এ ধরনের ‘অমানবিক কর্মকাণ্ডের’ ‘দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার’ অঙ্গীকার করেন তারা।