প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগটি যেহেতু বিশ্ব ব্যাংক করেছিল, সেহেতু ক্ষমা চাওয়ার কথা তাদেরকেই বলতে সজীব ওয়াজেদ জয়কে পরামর্শ দিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। রোববার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ প্রধানমন্ত্রী তনয় বলছেন, ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ কী? যারা সেদিন বড় গলায় কথা বলেছেন, দুর্নীতি দুর্নীতি বলে চিৎকার করেছেন, ড. ইউনুস থেকে শুরু করে বিরোধী দলকে তিনি এটা বলছেন।
“এই অভিযোগটা তো করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। সেই বিশ্ব ব্যাংককে বলুন না কেন? তাদের ব্যাখ্যা কী?”
এরপর রিজভী নিজেই উত্তর দেন, “গতকাল সাংবাদিকরা তাদের (বিশ্ব ব্যাংক) সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তারা বলেছেন, কথা যা আছে, তা আগেই তারা বলেছেন। তার অর্থ, তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।”
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।
রায় উদ্ধৃত করে কানাডিয়ান পত্রিকা দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল বলেছে, ফোনে আড়ি পেতে সংগ্রহ করা যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রসিকিউশন মামলা সাজিয়েছিল তাকে ‘গাল-গল্প ও গুজব’ বলে ছুড়ে ফেলেছেন বিচারক।
এর আগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনও জানিয়েছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
কানাডার আদালতের রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেইসবুকে এক পোস্টে লেখেন, সরকারের সুনামহানি করতেই বিশ্ব ব্যাংক ওই ষড়যন্ত্র করেছিল।
শেখ হাসিনাও সম্প্রতি সংসদে বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকের ভূমিকা ছিল।
জয় লিখেছেন, “এটা লজ্জাজনক যে, আমাদের সুশীল সমাজের একটা অংশ দ্রুত আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে ও বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষে অবস্থান নেন। তারা বেশ কয়েকজন পরিশ্রমী, সম্মানিত যোগ্য মানুষের গায়ে কালিমা লেপন করেছেন…যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তারা দেশপ্রেমিক নয়।”
এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সরকার এবং ‘সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়া’ ব্যক্তিদের কাছে ওই সমালোচকদের এখন ‘ক্ষমা চাওয়া উচিৎ’ বলে মনে করেন জয়।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন থেকে চার বছর আগে বিশ্ব ব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর নিজস্ব অর্থায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘নবগঠিত নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় পদ্মা সেতুর রায় ও জয়ের বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, দুর্নীতি হচ্ছে এই সরকারের ‘ধ্যান-জ্ঞান’। যারা দুর্নীতিবাজ, তারা এই সরকারের ‘সবচাইতে আপনজন’।
“এসএনসি-লাভালিন কোম্পানির বিষয়ে কানাডার আদালতের রায় নিয়ে এখন সরকার উল্লাস করছে। এটা দেখে আমার মনে পড়ছে প্রখ্যাত ফারসি সাধক শেখ সাদীর সেই কথাটা- এমন একদিন আসবে, যেদিন দুর্নীতিবাজরা তার দুর্নীতির জন্য উল্লাস প্রকাশ করবে।”
পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর কখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরে যেতে হয়। সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে যেতে হয় কারাগারে।
দুদক অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় মোশাররফকে আবার চাকরিতে ফিরিয়ে শিল্প সচিব করা হয়।
রিজভী বলেন, “দুর্নীতি হচ্ছে এই সরকারের ইশতেহার, এই সরকারের আদর্শ। বিদ্যুৎ থেকে চুরি করতে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে, আইন করা হয়েছে। সুতরাং তাদের লোক, তাদের মন্ত্রীরা ফেরেস্তা হবেন, এমন ভাবার কোনো কারণ থাকতে পারে না।”
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সিলেটে জেলা প্রশাসনের এক কর্মচারীকে ধরতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের হামলার মুখে পড়ার ঘটনা তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি বলেন, “পত্রিকায় এসেছে, সে পুলিশসহ দুদক কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এই জেলা প্রশাসক কে? নূরুল হুদার মত (নতুন সিইসি কে এম নূরুল হুদা) সরকারের একজন অনুগত ব্যক্তি। তার এতোই প্রভাব, যে তার কর্মচারীরা দুদকের কর্মকর্তাকে আটকে রেখেছে, পুলিশের সাথে মারামারি করছে।”