প্রতিবেদক : শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আনা ১৬টি গাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানিয়েছেন, ওই ১৬টি গাড়ির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে তারা বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
“চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করতেন, তারা এখন কোথায় আছেন এবং গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী। উত্তর দেওয়ার জন্য তাদের সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।”
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে ‘মিথ্যা’ প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনার মধ্যেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ঋণদাতা ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের অনিয়ম নিয়ে তদন্তের উদ্যোগ নিল। শুল্ক ফাঁকির এই অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মইনুল খান বলেন, ২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পারসনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং এনবিআর ওই গাড়ির বিপরীতে একটি পাসবুক দেয়।
ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে তার আগে তাকে গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও ওই পাস বইয়ের তথ্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়।
মইনুল খান জানান, ওই সুবিধার আওতায় ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন মডেলের ১৬টি গাড়ি আনা হয়। সেই কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করলেও কাস্টমসের কাছে তাদের গাড়ির বিষয়ে কোনো তথ্য জমা পড়েনি।
যে ষোল কর্মকর্তার নামে গাড়িগুলো আনা হয়েছিল তাদের তালিকা চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মইনুল খান বলেন, সেসব গাড়ির পাসবুকও তলব করা হয়েছে।
ওই ষোল কর্মকর্তা হলেন- বিশ্ব ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এবং বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা শকুন্তলা আক্ষ্মীমান, ক্যাথি নোয়েল খু, বিনয় স্বরূপ, ওউসমানি সেকল ৬. হোসে এডগার্দো লোডেসক্যামডোজ, মিরভা তুলিয়া, মি. দাইদ, গ্রিনা ইগরসিনা, মৃদুলা সিংহ, তাহসীন সাঈদ খান, মাইয়ুনি ইসোগাইন, তানিয়া মানা ডি মিত্রাজেংকো, সেরিন ওজার, ফ্যাবিও পিটালুগা ও হেলেন জয় ক্রেইগ।
মইনুল খান বলেন, “তারা সম্মানিত লোক। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে বাংলাদেশ শাখার উচ্চ এবং মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা।”
তিনি জানান, প্রিভিলেজড পারসনস রুলসের আওতায় আনা গাড়ি হস্তান্তর করার তিনটি বৈধ উপায় আছে। ওই গাড়ি নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে, অন্য কোনো প্রিভিলেজড পার্সনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে, অথবা সব ধরণের কর ও শুল্ক দিয়ে সাধারণ ব্যক্তির যানবাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাওকে হস্তান্তর করা যেতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই ১৬ গাড়ির ক্ষেত্রে কী পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, গাড়িগুলো যথাযথ নিয়মে ডিসপোজাল না করেই ওই ১৬ কর্মকর্তা দেশত্যাগ করেছেন। গাড়িগুলো তৃতীয় কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে নিয়ম না মেনেই। একেকটি গাড়ি একেক মডেলের, সেগুলোর জন্য শুল্কের অংকও হবে আলাদা।
“সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এই টাকা আদায়যোগ্য। এক্ষেত্রে ওই ব্যাক্তি এবং তার মিশন দায় এড়াতে পারেন না।”
মইনুল খান বলেন, কেউ যদি আইন অমান্য করে গাড়িগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে।
“বিশ্ব ব্যাংক থেকে তথ্য পেলে ওই গাড়িগুলো কোথায় আছে তা জানতে আমরা অভিযান চালাব। আটক করা সম্ভব হলে গাড়িগুলো আমাদের আলামত হিসেবে থাকবে। যারা গাড়ির ব্যাপারে তথ্য দেননি, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।”
শুল্ক হিসেবে যে টাকা বাংলাদেশ সরকারের পাওনা হয়েছে, তা পরিশোধ করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের মিশন হেডকেও অনুরোধ করা হবে বলে জানান মহা পরিচালক।
“যারা এই গাড়িগুলো কিনেছেন, তাদের অনুরোধ করব- আপনারা স্বেচ্ছায় গাড়িগুলো জমা দিন। সেক্ষেত্রে আমরা আপনাদের সাথে নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করব।”